‘নাস্তিক’ শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল ঢাকা

নিউজ নাইন২৪, ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদকে নাস্তিক আখ্যায়িত করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেছেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নাস্তিক হওয়ায় তিনি কৌশলে পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চান। নাস্তিক এই শিক্ষামন্ত্রকে পদত্যাগ করতেই হবে। এ ধরনের শিক্ষামন্ত্রী আমরা চাই না। এই মুসলমান দেশে উনি থাকতে পারবেন না। এই শিক্ষানীতি যদি বন্ধ না করা হয়, তাহলে সরকার পতনের ডাক দেয়া হবে।’

শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ ও শিক্ষা আইন-২০১৬ বাতিলের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর এ সমাবেশের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকা ইউনিভাসিটিতে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, পরে ঢাকা মহানগর কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হন। উনি আজ ইসলামের বিরুদ্ধে, ইমান আকিদার ওপরে হানা দিয়েছে।’

সমাবেশের প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বর্তমান সিলেবাস থেকে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামগণের জীবনচরিত বাদ দিয়ে রামকৃঞ্চ ও রামায়ণের ইতিহাস সংযোজন করা হয়েছে। যা ৯২ ভাগ মুসলমানের ঈমান ও আমলে চরম আঘাত।’

চরমোনাই পীর বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ বাস্তবায়নে ইসলাম ও ইসলামই একমাত্র বাধা। তাই তারা সিলেবাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদের ঈমান ধ্বংস করে হিন্দুত্ববাদে ধাবিত করতেই নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও গল্প মোট ১৯৩টির মধ্যে ১৩৭টিই মুসলমানদের কৃষ্টিকালচারের বাইরে, নাস্তিক ও হিন্দুত্ববাদীদের লেখা।’

তিনি বলেন, ‘গরুকে মা সম্বোধন করে কোমলমতি শিশুদের হিন্দুত্ববাদ শেখানো হচ্ছে। দেব-দেবির নামে বলি দেয়া গরু বা পাঠা হালাল বলে শিখানো হচ্ছে। এভাবে সরকারের ছত্রছায়ায় মুসলমানিত্ব ধ্বংস করে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র চলছে।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় সময়ই বলে থাকেন আপনি মুসলমান, নামাজ পড়েন, কুরআন তেলাওয়াত করেন, নাস্তিকদের ব্যাপারে বলেছেন ধর্মের ওপর আঘাত করলে আপনার গায়ে লাগে, কাজেই ধর্ম ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলে ছাড় দেয়া হবে না। সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু শিক্ষা আইন, শিক্ষানীতির মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হিন্দুত্ববাদের দিকে নিয়ে যাওয়া কার স্বার্থে। আমরা মনে করি, আপনার অগোচরে এই শিক্ষানীতি এবং এই শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব অবিলম্বে বাতিল করুন। না হলে দেশের সমস্ত মুসলমানরা কঠোর আন্দোলন গড়ে উঠলে সরকারের আখের রক্ষা হবে না।’

জাতীয় শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে আগামী ১০-২৬ মার্চ জনমত গঠনের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। আগামী আগামী ১২ মে দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, ১৬ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি, ২০ মে শিক্ষক সমাবেশ, ২১ মে উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন এবং ২৭ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘মুসলমানিত্ব ধ্বংসের চক্রান্ত বন্ধ এবং হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মুসলমানিত্ব ধ্বংস করতে দিতে পারি না। কাজেই অবিলম্বে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ না করলে ঈমানদার জনতা মুসলমানিত্ব রক্ষায় রাজপথে নেমে আসবে।’

ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, আলহাজ আমিনুল ইসলাম, আলহাজ আলতাফ হোসেন, আহমদ আবদুল কাইয়ূম, এবিএম জাকারিয়া, জিএম রুহুল আমীন ও মুহাম্মদ খলিলুর রহমান প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে গণমিছিল শরু হয়। মিছিলের নেতৃত্বদেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।