নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আটা-ময়দার দাম

নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আটা-ময়দার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি করার পর এখনও ভোক্তাদের মোটা চাল কিনতে প্রতি কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। একইভাবে চিকন চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে নতুন করে অস্থির হয়ে উঠেছে আটা ও ময়দার বাজার। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই পণ্য দুটির দাম বাড়তে থাকায় সীমিত আয়ের মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কেজিতে আরও ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আটা-ময়দার দাম নতুন করে বাড়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন রাজধানীর মানিক নগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চালের দাম নাগালের বাইরে। একমাত্র আটা ও ময়দার দাম ছিল নিয়ন্ত্রণে। এখন সেই আটা ময়দার দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সীমিত আয়ের ক্রেতারা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকাম থেকে বেশি দাম দিয়ে আটা ময়দা কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোলা আটা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৪ টাকা। যা কয়েক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৭-২৮ টাকায়। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৬ টাকা।

আটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ময়দার দামও। বাজারে এক কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা ৪২ টাকায়। যেখানে দুই সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৩৭-৪০ টাকা। আর প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪২-৪৪ টাকা।

কাওরান বাজারের আটা ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, বস্তা প্রতি আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যান ভাড়া মিলে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪ শ’ টাকা পড়ছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে ৩-৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

বলা হচ্ছে, গমের আন্তর্জাতিক বাজার বেশ কিছু দিন ধরে পুরোদমে অস্থিতিশীল। এ অস্থিতিশীলতার প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে দেশের খাদ্য ও নিত্যপণ্যের বাজারেও। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে গম ও গমজাত পণ্য আটা-ময়দার দাম। গমের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল কয়েক মাস ধরে। এর মধ্যে গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড সর্বোচ্চ। সেখান থেকে বর্তমানে কিছুটা কমে এলেও এখনও স্থিতিশীলতা ফেরেনি বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারের এ অস্থিরতার কারণেই দেশের বাজারে গম ও গমজাত পণ্য আটা ময়দার দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ( বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে গম আমদানি হয়েছে ৫৪.৪৩ লাখ টন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫.৪০ শতাংশ কম।

এদিকে এই সপ্তাহে নতুন করে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে মসুর ডালের (মোটা দানা) দাম। গত সপ্তাহে যে ডালের দাম ছিল ৮৫ টাকা কেজি। আজ সেই ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলের। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। ৫ লিটার বোতল জাত সয়াবিনের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। পামওয়েল (খোলা) প্রতি লিটারের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। পামওয়েল (সুপার) দাম ৪ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-১০ টাকা করে।
গতকাল শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি করছেন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তবে পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।

অন্যদিকে সবজি ব্যবসায়ীরা শিমের কেজি বিক্রি করছেন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে গাজর ও টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা সবজির মধ্যে ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এ ছাড়া পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

বাজারে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশ মাছ পাওয়া গেলেও দাম এখনও তুলনামূলক বেশি। বড় (এক কেজির ওপরে) ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা। মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। আর ছোটগুলো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা। মৃগেল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা।