দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ নাইন২৪ডটক, ঢাকা: দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সব নামকরা হাসপাতালের সঙ্গে দেশের হাসপাতালগুলোকে যুক্ত করে চিকিৎসাব্যবস্থা ‘নতুন ধারায়’ নিয়ে আসব।

তিনি বলেন, ‘জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবক্যামেরা থাকবে। যখন প্রয়োজন হবে, তারা মতামত নেবে, দেখবে। সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। আমরা চিকিৎসা আরো উন্নত করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাজধানীর চাঁনখারপুলে দেশের প্রথম ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের’ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যারা বড়লোক তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন, তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু দেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে একটি করে বার্ন ইউনিট চালু করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্বমানের এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য থাকবে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে। চাঁনখারপুলে ১.৭৬ একর জমিতে এই ইনস্টিটিউট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি টাকা।

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে আশা করছে সরকার।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন অনুষ্ঠানে জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৬ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে দগ্ধ হন। তাদের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে দেড় হাজার ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ সার্জন প্রয়োজন হলেও বর্তমানে মাত্র ৫২ জন সেই সেবা দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এফসিপিএস ডিগ্রি দিলেও সেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত।

নতুন এই ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হলে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন চিকিৎসক এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবেন।

১. বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মিত হবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে।

২. দুই তলা বেইজমেন্টসহ মোট ১২ তলা বহুতল ভবন হবে তিনটি ব্লকে।

৩. একটি ব্লকে বার্ন, একটিতে প্লাস্টিক ও অন্যটিতে একাডেমিক ভবন হবে।

১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ছয়টি বেড নিয়ে বার্ন বিভাগ চালু করেন দেশের প্রথম প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। অধ্যাপক সামন্ত লালের চেষ্টায় ২০০৩ সালে সেটি ৫০ বেডের পূর্ণাঙ্গ ইউনিট হিসেবে কাজ শুরু করে।

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর বার্ন ইউনিটের সক্ষমতা আরো বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এ ইউনিটের বেড বেড়ে প্রথমে ১০০ ও পরে ৩০০ হয়।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ অন্যদের বক্তব্যেও সেসব ঘটনার কথা উঠে আসে।

এসব বিষয় বিবেচনা করেই গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মানের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।