তাহের-ননীর যুদ্ধাপরাধের রায় আজ, মীর কাসেমের আপিল শুনানির অপেক্ষায়

Tribunal high court

ঢাকা: নেত্রকোণার ওবায়দুল হক ওরফে আবু তাহের ও আতাউর রহমান ননীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানা যাবে আজ (মঙ্গলবার)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিরস্ত্র মানুষকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ এবং হত্যার ছয় অভিযোগ রয়েছে এই দুই আসামির বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার বিচারক আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের এই তারিখ ঠিক করে দেন। উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১০ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে। জানুয়ারির শুরু থেকে চার দিন রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। আসামি পক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবাহান তরফদার ও গাজি এম এইচ তামিম। তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দুইজন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করতে গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনা জেলা সদর ও বারহাট্টা থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য তারা ‘কুখ্যাত রাজাকার’ হিসেবে পরিচিতি পান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে তাহের স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ননীসহ অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের নিয়ে নেত্রকোনা শহরের মোক্তার পাড়ার বলয় বিশ্বাসের বাড়ি দখল করে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য। ২০১৩ সালের ৬ জুন এ দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা। এক বছর চার মাস ২৮ দিন তদন্তের পরে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর দেয়া হয় তদন্ত প্রতিবেদন।
প্রসিকিউশনের আবেদনে আদালত পরোয়ানা জারি করলে ওইবছর ১২ অগাস্ট দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে নেত্রকোণার পুলিশ। পরদিন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পাঠানো হয় কারাগারে। প্রসিকিউশন এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর গতবছর ২ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুই আসামির যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।

মীর কাসেমের আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায়:
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধেরে দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল মামলা শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবারের  কার্যতালিকায় এসেছে। গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, মীর কাসেমের আপিল মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ৬ নম্বরে আছে।

প্রধান বিচারক এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারকের বেঞ্চ মীর কাসেমের আপিল শুনানি গ্রহণ করবেন। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি মীর কাসেমের আপিল শুনানির জন্য এ দিন নির্ধারণ করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা। আপিলে তার খালাসের পক্ষে ১৮১টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর চেয়ারম্যান বিচারক ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেমকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জসিম ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে হত্যার দায়ে আদালত তাকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর; ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ৭ বছর করে এবং ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদ-ের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অপরদিকে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাসেমকে অব্যাহতি দেয়া হয়।