তাহের-ননীর ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ

noni_taher1454395157

ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত নেত্রকোনার ওবায়দুল হক (তাহের) ও আতাউর রহমানকে (ননী) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এই রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ সকালে দুই আসামিকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে তাঁদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর ২৬৮ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
ওবায়দুল ও আতাউরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে চারটি প্রমাণিত হয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি ওবায়দুল ও আতাউরের বিরুদ্ধে মামলাটির কার্যক্রম শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ চার কার্যদিবসে যুক্তি উপস্থাপন করে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন কৌঁসুলি মোখলেছুর রহমান ও সাবিনা ইয়াসমিন। আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুস সোবাহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম।
২০১৩ সালের ৬ জুন ওবায়দুল ও আতাউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত শুরু করে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১২ আগস্ট তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। পরদিন তাঁদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। ট্রাইব্যুনাল তাঁদের কারাগারে পাঠান। এরপর থেকে তাঁরা কারাগারে আছেন। ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর ওই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর গত বছরের ২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল ওবায়দুল ও আতাউরের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ গঠন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ওবায়দুলের (৫৫) বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়া গ্রামে। আতাউরের (৫৮) বাড়ি একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁরা দুজন কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে পরিচিতি পান।
ছয় অভিযোগ
ওবায়দুল ও আতাউরের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, একাত্তরের ১৭ আগস্ট এ দুই আসামির নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর হত্যা করে।
দ্বিতীয় অভিযোগ, ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টার শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সামনে থেকে আসামিরা ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করেন।
তৃতীয় অভিযোগ, ১৯ অক্টোবর আসামিরা বারহাট্টার লাউফা গ্রাম থেকে ১০ জনকে অপহরণের পর ঠাকুরাকোনা সেতুতে নিয়ে যান এবং সেখানে সাতজনকে হত্যা করেন।
চতুর্থ অভিযোগ, তাঁরা নেত্রকোনার মলয় বিশ্বাস ও শীষ চন্দ্র সরকারকে পরিবারসহ দেশত্যাগে বাধ্য করেন।
পঞ্চম অভিযোগ, ১৫ নভেম্বর আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামানসহ ছয়জনকে অপহরণ করে গুলি করেন।
ষষ্ঠ অভিযোগ, আসামিরা চন্দ্রনাথ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।