তাইওয়ান নিয়ে চীনের পরিকল্পনা ছোট করে দেখা উচিত নয়: সিআইএ পরিচালক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনারা কিছুটা পিছু হটায় কিছুটা স্বস্তির সৃষ্টি হলেও, তাইওয়ান নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেটিকে ছোট করে দেখার উচিত হবে না।

এদিন ওয়াশিংটনে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বার্নস আরও বলেন, শি তার বাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে স্বশাসিত তাইওয়ানে আক্রমণ চালাতে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইএ গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এমন তথ্য জানতে পেরেছে।

‘তবে এর অর্থ এমন নয় যে, চীনা প্রেসিডেন্ট ২০২৭ বা অন্য কোনো বছরে আক্রমণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তাইওয়ানকে আক্রমণ করার আকাঙ্ক্ষা শি’র আছে। সুতরাং বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব দিয়ে দেখার যোগ্য। আমরা (সিআইএ) তাইওয়ান নিয়ে প্রেসিডেন্ট শির এ আকাঙ্ক্ষাকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখি না।’

বার্নসের দাবি, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর দুর্বলতা দেখে চীনের প্রেসিডেন্ট স্তম্ভিত ও বিচলিত হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি তিনি এমন পরিস্থিতি থেকে উপযুক্ত শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক প্রতিশ্রুতিকে খাটো করে দেখাটাও ভুল বলে মনে করেন বার্নস। একই সঙ্গে তার দাবি, বেইজিং-মস্কোর বন্ধুত্ব মোটেই সীমাহীন নয়। তবে চীনকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন বার্নস।

তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাত্রাগত দিক থেকেই অনন্য। শুধু সামরিক ও আদর্শগতভাবে নয়, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, সাইবারজগত, সমুদ্রজগত থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। বিশ্বজুড়ে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে ধরন, তাতে এটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়েনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়েও তীব্র হতে পারে।

এদিকে, বার্নসের মন্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাস থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি

ইউক্রেইনে রুশ সেনারা প্রবেশ করার কিছুদিন আগে মস্কো ও বেইজিং নিজেদের মধ্যে ‘সীমাহীন বন্ধুত্বের’ চুক্তি সই করে। তাছাড়া, সম্প্রতি চীন-রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার বিষয়টিও পশ্চিমাদের দুশ্চিন্তার কারণে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশে মিত্র দেশের সামরিক অভিযান দেখে, চীনও তাইওয়ানে একই ধরনের অভিযান চালাতে পারে- এমন উদ্বিগ্নতা কাজ করা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের মধ্যে।

বেইজিং তাইওয়ানকে তার একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে। তাই চীনের মূলভূখণ্ডে দ্বীপটিকে অন্তর্ভূক্ত করার বলপ্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন দেশ মনে করে। আর মুখে ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করার কথা বললেও তাইওয়ানকে রক্ষায় সামরিক সহযোগিতা করার আইনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দোষ না দিলেও, দেশটিকে সরাসরি সহযোগিতা করা থেকে বিরত রয়েছে। কারণ রাশিয়াকে সরাসরি সামরিক সরঞ্জাম দিলে মস্কোর মতোই বেইজিংও পশ্চিমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।