ঢাকায় আইমানের ‘মান’ পার্টির নামে অশ্লীলতা করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আইমান নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আয়োজিত মডেল ইউনাইটেড ন্যাশনস বা মান বাংলাদেশের ‘সিক্রেট পার্টি’তে অশ্লীলতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডের একটি ক্লাব কাম রেস্টুরেন্টে গত এক থেকে তিন মার্চ পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সেখানকার একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম- সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন।
জানতে চাইলে সাইবার সিকিউরটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা ইতোমধ্যে আয়োজকদের কয়েকজনকে ডেকে এনে কথা বলেছি। তারা তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভিডিওগুলো নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি।’

এদের এমন কিছু ভিডিও রয়েছে তবে তা প্রকাশের যোগ্য নয়।
মডেল ইউনাইটেড নেশনস্ (মডেল ইউএন বা এমইউএন হিসেবেও পরিচিত) একটি অ্যাকাডেমিক অনুশীলন, যা বিজ্ঞান, যোগাযোগ ও বহুমূখী কূটনীতি নিয়ে কাজ করে। মডেল ইউনাইটেড নেশন্স সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আন্ত-সরকারি সংস্থার (ইন্টারগভার্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন-আইজিও) অনুশীলন পর্বে বিদেশি কূটনীতিকের ভূমিকায় অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের একটি দেশ নিয়ে গবেষণা করতে হয় এবং সে দেশের কূটনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো খতিয়ে দেখে এবং তা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা করে এবং বৈশ্বিক ইস্যুগুলোর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়।

আইমানের ‘সিক্রেট পার্টি’ তে অশ্লীল আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি করে কিশোর-কিশোরীরা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে মডেল ইউনাইটেড নেশনস্ এর নামে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১লা মার্চ থেকে তিন মার্চ পর্যন্ত এয়ারপোর্ট রোডে অবস্থিত একটি ‘ক্লাব কাম রেস্টুরেন্ট’-এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ‘আইমান’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল দেশের ইংরেজি ও বাংলামাধ্যমের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের সূচিতে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে ভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হলেও সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানকে ‘সিক্রেট’ হিসেবে শুধুমাত্র নির্বাচিতদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। এসময় নিচু ক্লাসের কিশোর-কিশোরীদের প্রবেশাধিকার ছিল না। এই সিক্রেট অনুষ্ঠানেই নানারকম অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে কিছু শিক্ষার্থী যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
সূত্র জানায়, এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল দুজন প্রভাবশালীর ছেলে। এতে ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘সিক্রেট’ পর্বে অশ্লীল কুরুচির বেশ কিছু আয়োজন করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে আয়োজকরা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দাবি করেন, তাদের অজ্ঞাতসারে কেউ কেউ এসব করেছে।তবে এই অনুষ্ঠানের নাম করে ছেলেমেয়েদর মধ্যে অশ্লিলতার বীজ বপন করা হচ্ছে।
একজন অংশগ্রহণকারী জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেখানে থাকা মেয়েটি ঢাকার বিখ্যাত একটি স্কুলের নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। ভিডিওতে ওই কিশোরীকে যে মেয়েটি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে উৎসাহিত করছিল সে একজন উঠতি মডেল বলে জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে থাকা ওই অংশগ্রহণকারী আরও জানান, এটি ছিল ডিজে পার্টির আয়োজনের মতো। কিন্তু নাচ ও গানের সঙ্গে এখানে মুখোশ পড়ে এবং লাইট অফ করে ছেলেমেয়েদের অনৈতিক কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। মুখোশ পরার কারণ, কেউ যাতে কাউকে না চেনে বা কারও পরিচয় প্রকাশ না পায়। সিক্রেট পর্বের সব কিছু সিক্রেট রাখার নির্দেশ ছিল আয়োজকদের। কিন্তু সে নির্দেশ অমান্য করে সেখানে অংশ নেওয়াদের অনেকেই প্রকাশ্যে ছবি তুলে ও ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এসময় আয়োজকদেরও অনেকে নিজেদের নির্দেশ ভুলে ভিডিও করেন। পরে এসব ভিডিও তাদের ফেসবুক পেইজে আপলোড করেন।
এদিকে আয়োজকদের বক্তব্য জানতে আইমান সংশ্লিষ্ট একজনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

যোগাযোগ করা হলে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব কন্টেন্ট পেয়েছি, সেগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে এই ঘটনার পেছনে যারা রয়েছেন, অনুসন্ধান সাপেক্ষে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এছাড়া এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য সামাজিক আন্দোলনসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’