‘চাল এখন সাধারণ ব্যবসায়ীদের হাতে নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে চালের বাজার সহসা স্বাভাবিক হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজধানীর চালের সবচেয়ে বড় ও প্রধান পাইকারি বাজার ‘বাবুবাজার-বাদামতলী চাউল আড়ৎদার সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, চাল এখন সাধারণ ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। বড় বড় কোম্পানির হাতে। প্যাকেটজাত চালের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ব্রান্ডভ্যালু। প্রতিকেজি চাল তারা বিক্রি করছে ৮০-৮৫ টাকায়। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ বাজারে।

নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ধানের দাম এখন সবচেয়ে বেশি। প্রতি মণ ১২শ টাকারও বেশি। এক মণে ২৫-২৬ কেজি চাল হয়। সেই চাল থেকে ভাঙাচাল আলাদা করা হয়। পরিষ্কার ও ঝকঝকে করা হয় মেশিনে। সেখানেও পরিমাণ কমে। সব মিলিয়ে ২৪ কেজির বেশি পাওয়া যায় না। যুক্ত হয় প্রক্রিয়াজাত খরচও। এখন প্রতিকেজি মোটাচালের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৮ টাকার বেশি। যে চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৪২-৪৪ টাকায়। মাঝারি মানেরটা বিক্রি হয় ৪৪-৪৬ টাকায়। প্রতিকেজি মিনিকেট বা নাজিরশাইল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ৫২-৫৬ টাকায়। এটাই এলাকাভেদে খুচরা বাজারে ৫৮ টাকা, ৬২ টাকা এবং ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই চাল বিভিন্ন শপিংমলে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮২ টাকা কেজিতে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে চালের দামের এই ব্যবধান সম্পর্কে নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, এখন চালের ব্যবসা করছে সিটি গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ, রূপচাঁদা গ্রুপ। তাদের উৎপাদন খরচ বেশি। দাম পড়ে ৮০-৮২ টাকা। এ কারণে যেটি প্যাকেটজাত করা হয় না সেটা ৭০-৭২ টাকায় তো বিক্রি হবেই।
তিনি জানান, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাই চালের দাম বাড়লেও অনেকের গায়ে লাগে না। নিজাম উদ্দিনের মতে, একজন রিকশাচালকের দৈনিক আয় কমপক্ষে ৮০০ টাকা। এমনকি অনেক ভিক্ষুকের আয়ও এমন। এরা একবার চায়ের দোকানে বসেই খরচ করে ৪০-৫০ টাকা। কাজেই, দিনে আড়াইশ গ্রাম চাল খাওয়ার খরচ নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যাথা নেই। এ বিবেচনায় চালের বাজার ঠিকই আছে বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমান বাজারদরের চেয়ে আরও কমে যদি সাধারণ মানুষকে চাল খাওয়াতে হয়, তবে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। সরকারের ১০ টাকা কেজি দরের চাল আছে। ৩০ টাকা কেজি দরেরও আছে। এর পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া কম দামে চাল খাওয়ানোর আর পথ আছে বলে মনে হয় না।
ধানের দাম কমবে কিনা এমন প্রশ্নে এই ব্যবসায়ী জানান, সরকার চাল আমদানির অনুমতি না দিলে দাম আরও বাড়তো। আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাজার স্থিতিশীল আছে। ধানের দাম আর কমবে বলে মনে হয় না। বড় বড় কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার মণ কিনে রাখার সামর্থ আছে। যা সাধারণ ব্যবসায়ীদের নাই। আগে কৃষক ধান বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি নিয়ে যেতেন। এখন সেদিন নেই। কোনও কৃষকের ধান অবিক্রিত থাকে না। বড় বড় কোম্পানি কিনে নেয়। দেশে অটো রাইসমিলও বেড়েছে। কাজেই ধানের দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।