ঘোড়াশাল জাতের সুস্বাদু আনারসের খ্যাতি দেশজুড়ে

ঘোড়াশাল জাতের সুস্বাদু আনারসের খ্যাতি দেশজুড়ে

নরসিংদী সংবাদদাতা: নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সুস্বাদু ঘোড়াশাল জাতের আনারস খ্যাতি অর্জন করেছে দেশজুড়ে। দেশের অনেক জায়গায় আনারসের চাষ হলেও সারাদেশে ঘোড়াশাল জাতের আনারসের স্বাদ ও গুনগত মানের কারণে আলাদা খ্যাতি রয়েছে। আর ঘোড়াশাল জাতের ফল মানেই রসে টসটস। যা খেলে জিহবায় লেগেই থাকে। সেই সুবাদে ঘোড়াশাল জাতের সুস্বাদু আনারসের দাম ও চাহিদা দুটিই বেশ চড়া।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াশাল জাতের মাটির ধরন, পরিবেশ এবং ফল গাছে প্রয়োগকৃত জৈব সারের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখানকার আনারসের স্বাদ বেশি হয়ে থাকে। শত শত বছর ধরে এই গ্রামে চাষকৃত আনারস মূলত হানিকুইন নামের একটি জাত থেকে সৃষ্টি হয়েছে। একে ঘোড়াশাল জাতের আনারস বলা হয়ে থাকে। তবে জাতের চেয়েও এখানকার মাটির গুণই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। একটু উঁচু জমিতে আনারসের চাষ করা হয়। এলাকাটি একটু উঁচু হওয়ায় অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যা পৌঁছতে পারে না।

পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের রাবান, বরাব, সাতটেকিয়া, বিলপাড়, ভালুকাপাড়া, ছয়দড়িয়া, বাঘাব, কুড়াইতলীসহ আরো কয়েকটি গ্রামে আনারসের চাষ হয়ে থাকে। অধিকাংশ বাগানে আনারসের চাষ হয় পুরনো পদ্ধতিতে। চলতি বছর রাবানে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১১ টন আনারসের ফলন হয়েছে। রাবানে চলতি বছর ১৫৯৫ মেট্রিক টন আনারসের ফলন হয়েছে। তবে এবার অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় আনারসের ফলন কম হয়েছে। সময়মতো বাগানে পানি না দেওয়ায় আনারসের আকারও ছোট হয়ে গেছে। যার কারণে বাজারে আনারসের দাম কম পাওয়া গেছে।

ভালুকাপাড়ার এক আনারস চাষি জানায়, এ বছর এক বিঘা জমিতে আনারসের বাগান করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে বাগানে পানির অভাবে তেমন ভালো ফলন আসেনি। তবে বাজারে ঘোড়াশাল জাতের আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় তেমন কোনো ক্ষতির মুখে পড়িনি।

পলাশ কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানায়, আনারস চাষে শ্রম কম ও লাভ বেশি হওয়ায় ঘোড়াশাল জাতের প্রতিটি বাড়িতেই আনারস চাষ করা হয়। আমরা আনারস চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। আনারসের ফলন যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য কৃষকদের সময়মত সুষম সার, খরায় পানির সেচ ও বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এবার খরায় আনারস বাগান পানি না পাওয়ায় আনারসের আকার কিছুটা ছোট হয়ে গিয়েছে। তারপরও ঘোড়াশাল জাতের আনারসের খ্যাতির কারণে কৃষকরা ভালো দামই পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নরসিংদীর উপ-পরিচালক জানায়, জেলায় ২৪৬ হেক্টর জমিতে ঘোড়াশাল ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ করা হয়। এরমধ্যে ২৩৬ হেক্টর জমিতেই ঘোড়াশাল জাতের আনারস চাষ হয়। তবে পলাশের রাবান এলাকার আনারস মাটির ধরণ ও পরিবেশের কারণে বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে, যার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আনারসের চাষ বৃদ্ধিতে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর আনারসের জাত উন্নয়ন, স্বাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষিবিভাগ।