গুলিস্তানে সংঘর্ষে নিহত: ‘আমার বাপের কী দোষ, ও তো কোনো দল করত না’

শেরপুর সংবাদদাতা: রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বাবা আবদুস সাত্তারের আহাজারি। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। রোববার দুপুরে নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামে

গত জুমুয়াবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন পথচারী হাফেজ রেজাউল (২১)। তিনি শেরপুরের নকলা উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি আবদুস সাত্তারের বড় ছেলে।

গত শনিবার সকালে রেজাউলের চাচা আজাহারুল ইসলামের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তার মৃত্যুর খবর দেয় নকলা থানা—পুলিশ। পুলিশ তাদের ঢাকায় গিয়ে রেজাউলের লাশ আনতে অনুরোধ করে। হঠাৎ ছেলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন রেজাউলের মা—বাবা। এ ছাড়া তিন দিনেও ছেলের লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

নিহত রেজাউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা মিরগী নদীর পাড় ঘেঁষে রেজাউলদের বাড়ি। বাড়ির পাশে নারায়ণখোলা পশ্চিম আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়। আশপাশে আর কোনো ঘরবাড়ি নেই। বাড়ির দক্ষিণে বাঁশঝাড়ে পারিবারিক কবরস্থানে রেজাউলের জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে। তার পাশে কবরের জন্য চাটাই তৈরি করছেন এক ব্যক্তি।

ছেলের কথা বলতেই আবদুস সাত্তার বুক চাপড়ে বলতে থাকেন, ‘কত কষ্ট কইরা লেহাপড়া (লেখাপড়া) করাইতাছি। জুমুয়াবার দুপুরেও মোবাইলে কথা হইল। পুলাডা ডেঙ্গু পরীক্ষা করব বইলা তিন হাজার টাকাও চাইছে। জুম্মার দিন বাজারের দোকান বন্ধ আছিল বইলা পাঠাবার পাই নাই। পরদিন সকালে তো শুনি বাপ আমার নাই। আমার বাপের কী দোষ, ও তো কোনো দল করত না। তাইলে কেন অরে মারল? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, আমার পুলারে যারা মারছে, আপনে তাদের সঠিক বিচার করবাইন।’

প্রতিবেশী ও স্বজন বন্দেজ আলী বলেন, সব সময় হাসিখুশি রেজাউল কোনো সাতপাঁচে ছিলেন না। তার ছোট ভাইও হাফেজ। রাজনীতি করতেন না। রোজার মাসে স্থানীয় মসজিদে খতম তারাবি পড়ান। এই ছেলে বিনা কারণে মারা গেলেন। অথচ চেয়ারম্যান ছাড়া প্রশাসনের কোনো লোক বা জনপ্রতিনিধি খোঁজও নিলেন না।

চরঅষ্টধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী বলেন, রেজাউল অত্যন্ত ভদ্র ও ধার্মিক ছেলে ছিলেন। তার বাবা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। রেজাউল রাজনীতি করতেন না। রেজাউলের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টের।