কুরবানির চামড়া নিয়ে যে কারণে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

কুরবানির চামড়া নিয়ে যে কারণে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এবার নানামুখী সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন-এবার ৬ কারণে কুরবানির পশুর চামড়ারক্ষার জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণগুলো হলো- নগদ অর্থের সংকট, পশু কুরবানি কম হওয়ার আশঙ্কা, চামড়ার দাম কম হওয়া, মাঠপর্যায়ে সংগ্রহে বিলম্ব, প্রক্রিয়াজাতকরণের সংকট ও ব্যাংকঋণ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা।

চামড়াখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর দেশে পবিত্র কুরবানির পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম হবে। কারণ লকডাউনের কারণে কুরবানিদাতার আয়-সক্ষমতা কমে গেছে। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আর্থিক সংকটের কারণে কুরবানির পরিমাণও ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। কুরবানি কম হলে চামড়া সংগ্রহও কম হবে। লক্ষ্যমাত্রার চামড়া সংগ্রহ না হলে ট্যানারিগুলোর সারা বছরের কাঁচামালের মজুদ কমে যাবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাবছরের চামড়ার ৬০ শতাংশ আসে কুরবানির পশু থেকেই। কিন্তু এবার বিনিয়োগের মূলধন জোগানো কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার এক্ষেত্রে কুরবানির আগেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এ খাতের ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যাংক-ঋণখেলাপি। ফলে তাদের ব্যাংকঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। মূলধনের অভাবে তারাও বেপারিদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে পারবেন না। আবার যারা ঋণ পাবেন, তারা চামড়া ব্যবসায়ীদের আগের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করবেন, না চামড়া কেনায় বিনিয়োগ করবেন, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। কারণ লকডাউন পরিস্থিতিতে সবপর্যায়ের ব্যবসায়ীকেই আর্থিকভাবে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।

এদিকে, মাঠপর্যায়ে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া কুরবানির চামড়া সংগ্রহ করতেন, এবার তাদের হাতেও নগদ টাকার সংকট। ফলে এই ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই এবার এবার নিষ্ক্রিয় থাকবেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সমস্যার মূলে রয়েছে চামড়ার মূল্যনির্ধারণ প্রক্রিয়ায়ও। সরকার নির্ধারণ করে দেয় এক রকম, মাঠপর্যায়ের চিত্র দেখা যায় অন্যরকম। এবার আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার দাম কম। আর দেশেও অনেক আগ থেকেই দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ১৮-২২ বর্গফুটের পুরো একটি চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০০-৪০০ টাকায়। সেখানে কুরবানির চামড়া এই অল্প দামে কেনা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, এ রকম অস্থির পরিস্থিতিতেই এবার চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সবাই আর্থিক সংকটে আছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, বোঝা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিযেশন (বিটিএ)-এর সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সংকট উত্তরণে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেছি। তারা এসব সমস্যা সম্পর্কে জানেন। আমরা মনে করি, অর্থসংকটই হচ্ছে সব সমস্যার মূল কারণ। ফলে কুরবানি ও চামড়া সংগ্রহের হারও কম হবে।

লকডাউন পরিস্থিতির কারণে মাঠপর্যায়ে চামড়া সংগ্রহে ধীরগতি থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় অনেকে সময়মতো বিক্রি করতে চাইবেন না। ফলে সঠিক সময়ে লবণ, পরিবহণ ও প্রক্রিয়াজাতও করা যাবে না। এ কারণে কুরবানির পশুর ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।