কাশ্মিরীদের সুরক্ষা দিতে ভারত সরকারের প্রতি সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পালওয়ামায় গত সপ্তাহের হামলার জের হিসেবে কাশ্মিরী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এর ফলে কয়েক শত শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী ভারতের অন্য অংশ থেকে কাশ্মিরে ফিরে গেছেন। কোথাও কোথাও তাদেরকে উচ্ছেদের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে কাশ্মিরী জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
পালওয়ামায় ওই হামলা চালায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জৈশ ই মোহাম্মদ। এতে কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হন। এর পর বেশ কিছু কাশ্মিরী শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী হয়রান অথবা প্রহৃত হয়েছেন গত কয়েক দিনে। এ বিষয়ে ওই রাজ্যের কাছ থেকে জবাব চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এতে বলা হয়, ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালওয়ামা হামলার পর ভারতজুড়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান বিরোধী প্রতিবাদ হচ্ছে। এর ফলে ভারতের অন্যান্য অংশে বসবাসকারী কাশ্মিরী জনসাধারণের ওপর সরাসরি হামলা হচ্ছে। হামলা বা হয়রানির শিকার হতে পারেন এমন আতঙ্কে ভারতের অন্যান্য শহরে অবস্থানরত অনেক কাশ্মিরী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ফিরে গেছেন কাশ্মিরে। তাদের সংখ্যা কয়েক শত।
পুনেতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার হয়ে সাংবাদিকতা করেন কাশ্মিরী সাংবাদিক জিবরান নাজির দার। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার একদল মানুষ তাকে প্রহার করেছে। এ সময় তারা চিৎকার করে বলেছে, কাশ্মিরে ফিরে যাও। এ ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা নিবন্ধিত করেছে।
এমন নির্যাতনের শিকার কাশ্মিরী শিক্ষার্থীদের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন অনেক ভারতীয়। অনেকে তাদেরকে নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। ১৯৮০র দশক থেকে ভারত শাসিত কাশ্মিরে রয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহ। এ কারণে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অংশের সম্পর্কে টান রয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা দেশ ভাগ হয়ে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই এই কাশ্মির ইস্যুতে দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে চরমে। দু’দেশই কাশ্মিরের পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এর অংশবিশেষ। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও অন্য ১০টি রাজ্য, যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাশ্মিরী মানুষ আছেন, তাদেরকে ইঙ্গিত করে সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হুমকি বা সহিংসতার মুখে পড়েন যদি কোনো কাশ্মিরী তিনি কোন কোন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ভারতের অন্য স্থানগুলোতে বসবাসকারী কাশ্মিরীদের সুরক্ষা বিষয়ক একটি আবেদনের শুনানিতে এ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এমন একজন আবেদনকারী হলেন তেহসিন পুনাওয়ালা। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, কাশ্মিরীদের ওপর হামলা হওয়ার খবর পড়ার পর তিনি বিরক্ত হয়েছেন। তাই আদালতে গিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা কাশ্মিরী ইস্যু নয়। এটা মানবজাতির বিষয়। আমরা এমন একটি দেশ চাই না যেখানে সহিংস দাঙ্গা হবে।