কলকাতার ডাক্তার গৌতম খাস্তগীরের প্রতারণার ফাঁদ বাংলাদেশে

Image result for fraud doctors

ঢাকা: শাশুড়িকে নিয়ে জামাই এসেছে ডাক্তারের চেম্বারে। শাশুড়ির বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। মহিলা ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা! গর্ভে বেড়ে উঠছে দু-দুটি ভ্রুণ। আগে মেয়ে নিয়ে আসতো মাকে। কিন্তু সম্প্রতি মেয়ের শিশুপুত্র জন্মানোয় এবার শাশুড়িকে নিয়ে এসেছে জামাই। ব্যাপারটা আজব ঠিকই। কিন্তু নিখাদ সত্যি!

এমন টোপ ফেলেই এবার বাংলাদেশের রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেছে কলকাতার কথিত প্রজনন বিশেষজ্ঞ এবং গাইনোকোলজিক্যাল এন্ডোস্কোপিক সার্জন ডা. গৌতম খাস্তগীর। প্রথমে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, পরে ঢাকায় একটি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছিয়েছে এই চিকিৎসক।

ঢাকার উপকণ্ঠে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একদফা রোগী দেখে চলতি মাসের শেষ দিকেই দ্বিতীয় দফায় আবার রোগী দেখতে আসবে সে।

প্রথমবারের চিকিৎসা নেয়া ২২ জন রোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের এক কথা। ডা. গৌতম খাস্তগীরের রোগী দেখা আর প্রতিশ্রুতির তুবড়ি ফোটানো বাক্যালাপে ভেবেছিলাম এই বুঝি মা হয়ে গেলাম। চিকিৎসাও নিলাম। পরে দেখলাম সবই ভুয়া।

ডা. গৌতম খাস্তগীরের মোহ কেটে গেছে? কেন আর কিভাবেইবা মোহ কাটলো?

উত্তরে ঢাকার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একজন নারীকর্মী জানান, খবরের কাগজে তাকে নিয়ে লেখাখেলি যে বাংলাদেশে তার বাজার সম্প্রসারণ বা মার্কেটিং কৌশল প্রথমে তা বুঝতে পারিনি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, কোথায় ডাক্তারের ফি তিন হাজার টাকা আছে বলুন! বিকাশের মাধ্যমে ওই হাসপাতালকে তিন হাজার টাকা অগ্রিম ফি দিলাম। সিরিয়াল নিলাম। তার চেম্বারে যাবার আগে সহকারীরা আগের চিকিৎসাপত্র দেখলো। দিলো এক গাদা টেস্ট। সেটাও করালাম। তারপর মাত্র মিনিট তিনেক সেসব কাগজপত্রে চোখ বুলিয়ে সে বললো, বাংলাদেশে হবে না। কলকাতায় আসুন। তারপর ধরিয়ে দিলো নিজের ভিজিটিং কার্ড।

এই হলো চিকিৎসা!

সুলতানা জামান (ছদ্মনাম) নামে আরেক সন্তান প্রত্যাশী বলেন, প্রথমে তাকে ঢাকায় দেখালাম। তার নির্দেশনা মতো কলকাতায় গেলাম। বললো, টেস্টটিউব বেবী নিতে হবে। তারপর ধরিয়ে দিলো বিশাল এক খরচের ফর্দ। অথচ কোলকাতায় যাবার আগে এমনভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিলো যে, গেলেই বোধ হয় মা হয়ে যাবো। সে কাউকে নিরাশ করে না, যোগ করেন সুলতানা।

সন্তানপ্রত্যাশী ফজলুল হক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি জানান, এবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তার এক আত্মীয় ওই হাসপাতালে ডা. গৌতম খাস্তগীরকে দেখানো জন্যে ফোন দেন। বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে অগ্রীম ৫ হাজার টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ডা. গৌতম খাস্তগীরের প্রাথমিক স্বাক্ষাৎ মিলবে বলে জানানো হয়।

প্রিয়তা বালা (ছদ্ম নাম) নামে আরেক নারী বলেছে, ডা. গৌতম খাস্তগীরের পরামর্শে কোলকাতায় যাই। তার আগে স্বামীর সাথে এখানে সেখানে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি খোদ কোলকাতার রোগীদেরই তার প্রতি আস্থা নেই। যে কারণে বাংলাদেশী রোগীদের দিকে ঝুঁকছে সে। কিন্তু কিভাবে বাংলাদেশে সে ৫ হাজার টাকা ফি নিচ্ছে? কোন্ নীতিমালার আলোকে? এগুলো কি দেখার কেউ নেই। এভাবে সে বাংলাদেশ থেকে গোপনে অর্থ পাচার করছে কি করে?

কলকাতার একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানকার একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে ঢাকায় প্রতারণার ঘাঁটি গাড়তে চাইছে ডা. গৌতম খাস্তগীর। নিঃসন্তান দম্পত্তিদের আবেগকে পুঁজি করেই এখান থেকে কলকাতায় নিজের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাইছে সে।

তার বক্তব্য, রোগীদের প্রতি তার কোনো কমিটমেন্ট নেই। সে টাকাটাই বেশি চেনে। আর এদেশে তার বাপ-দাদার আবাস ছিলো সেই সহানূভূতিকে পুঁজি করেই দেশের নিঃসন্তান দম্পত্তিদের কোলে ফুটফুটে সন্তান এনে দেবার চিকিৎসার নামে চলছে দেশের মানুষকে নিঃস্ব ও সর্বশান্ত করার পাঁয়তারা। রোগীদের প্রতারণা ঠেকাতে এখনই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সর্তকতা অবলম্বন জরুরী বলে মনে করেন প্রতারিত রোগীরা।