ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকরা কোথায়

নিউজ ডেস্ক:ওয়াহেদ ম্যানশনচকবাজারের ট্র্যাজেডির পর থেকেই আলোচনায় ওয়াহেদ ম্যানশন। কেবল ভবনই নয়, এতে মজুত থাকা দাহ্য পদার্থের গুদামই এখন মূল আলোচনায়। যার কারণে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আশপাশের ভবনগুলোতেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। আলোচিত এই ভবনটির মালিক ছিলেন হাজী ওয়াহেদ। এরশাদের আমলে তিনি ছিলেন ওই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার। প্রায় একযুগ আগে তিনি মারা যান। এরপর উত্তরাধিকার সূত্রে ভবনটির মালিকানা পান তার দুই ছেলে হাসান ও সোহেল। ভবনটির দেখভাল করতেন হাসান। তিনি পরিবার নিয়ে ওই ভবনেই থাকতেন। ওই ঘটনার পর থেকে তাদের দেখা মেলেনি। তারা এখন কোথায় আছেন, তাও বলতে পারছেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন নামের ভবনটি তৈরি করা হয়। ভবনের মূল মালিকের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে হাসান ও সোহেল মালিকানা পান। সোহেল প্রায় সময়ই চট্টগ্রামে থাকেন। আর হাসান তার পরিবার নিয়ে ওই ভবনেই থাকতেন।
ওয়াহেদ ভবন স্থানীয়দের দাবি, ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে কেমিক্যালের যে গুদাম রয়েছে সেটির মালিক সোহেল। ঘটনার দিন দুই ছেলের মধ্যে একজন কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। অন্যজন বাসার বাইরে ছিলেন। তবে আগুনের ঘটনায় পরিবারের লোকেরা সবাই অক্ষত থাকলেও তারা গা-ঢাকা দিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভবনটির কার পার্কিং, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় কেমিক্যালের গুদাম রয়েছে। ওপরের তলাগুলো ছিল আবাসিক। সড়কে আগুনের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার গুদামে আগুন পৌঁছে যায়। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও পাঁচটি ভবনে।
প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে গড়ে ওঠা ভবনটি নির্মাণে ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা’ বা রাজউকের কোনও আইন মানা হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের চারপাশে নেই কোনও উন্মুক্ত জায়গা। বিশাল ভবনটিতে ওঠানামার জন্য একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। কার পার্কিংয়ের জায়গাটিও ব্যবহার করা হচ্ছে গুদাম হিসেবে। এই ভবনটির বিষয়ে বৈধ কোনও কাগজপত্রও নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউকের কাছে।
আগুনের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তেও বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। কমিটি মনে করে, বাড়িটি আইন মেনে নির্মাণ করা হয়নি।
ওয়াহেদ ভবনডিএসসিসি’র তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ভবন পরিদর্শনকালে দেখেছি পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ওয়াহিদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার পুরোটাতেই গুদাম ছিল। অন্যান্য ভবনগুলোতে কম বেশি গুদাম ছিল। এটি একটি বড় ভবন হওয়া সত্ত্বেও আগুন নেভানোর জন্য কোনও ইক্যুইপমেন্ট ছিল না। একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে, যা পর্যাপ্ত নয়। আগুনের সূত্রপাত যে কারণেই হোক না কেন, কেমিক্যালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে।’
ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান জাহিদ জানান, ‘ওয়াহেদ ম্যানশনসহ অন্যান্য ভবনগুলো রাজউকের অনুমোদিত কিনা আমরা সে বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য নিতে পারি নাই। ওদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে আসলে তারা অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন কিনা। এই সমস্যাটি পুরান ঢাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা।’
ডিএসসিসি’র স্থানীয় কাউন্সিলর মো. আনোয়ার পারভেজ বাদল বলেন, ‘ওয়াহেদ সাহেব ভালো লোক ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। আসলে বাসাবাড়িতে মালামাল মজুত করে রাখা পুরান ঢাকার বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন কাজ করছে।’
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, ‘আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনের অনুমতি নেই। সরকারের নির্দেশনার পর নতুন করে আর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। বর্তমানে যারা ব্যবসা করছেন, তাদের কারও বৈধ লাইসেন্স নেই। যেকোনও মূল্যে এলাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হবে। আর দায়ীদের বিরুদ্ধে কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’