উপরে আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করি না: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি কখনও মৃত্যুকে ভয় করি না। কারও কাছে মাথা নত করি না উপরে আল্লাহ ছাড়া। একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমি মাথা নত করি। কারণ আমি জাতির পিতার কন্যা, এটা আমি সব সময় মনে রাখি। জন্মালে মৃত্যু হবে, তাই মরার আগে আমি মরতে রাজি না।’ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে রোবাবার বিকেলে রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ওইদিন গ্রেনেড হামলার পর সেখানে আহত মানুষের সাহায্য দরকার ছিলো। আহত বা আঘাতপ্রাপ্তদের উদ্ধার না করে লাঠিচার্জ করা হয়, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলায় আমরা আইভি রহমানকে হারাই। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়েছে। অনেকে রক্তাক্ত হয়েছে। চারদিকে শুধু লাশ-লাশ দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটার পর একটা গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তারা ১৩টি গ্রেনেড মেরেছে। আমার গায়ে রক্ত দেখে অনেকে ভেবেছে আমি আহত। আল্লাহর রহমতে আমার শরীরে কোনো স্প্লিন্টার লাগেনি। হানিফ ভাইয়ের গায়ে লাগে, তিনি রক্তাক্ত হন। সেদিন গ্রেনেডের ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। চলে যাওয়ার সময় আমার গাড়িতে গুলিও করা হয়েছিলো। তবে বুলেট প্রুপ গাড়ি হওয়ায় গুলি লাগেনি। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ২১ আগস্টের দিন সমাবেশের আশপাশে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কোনো নিরাপত্তাবলয়ও ছিলো না। প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার পর আরও অনেককে হারিয়েছি। অনেকে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন। যতদিন যাচ্ছে তারা শারীরিকভাবে আসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। ‘এতো বড় একটি ঘটনা। যেখানে বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়েছে। বিএনপি নেত্রী উল্টো আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে, আমাকে একটা নিন্দা প্রস্তাব করতে দেয়া হয়নি’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। আল্লাহ কিছু মানুষকে কিছু কাজ দিয়ে পাঠান। তা না হলে আমি রক্ষা পেতাম না উলেøখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সমগ্র দেশে একইসঙ্গে আধা ঘণ্টায় পাঁচশ স্থানে বোমা হামলা চালানো হয়।

খালেদার কথায় ষড়যন্ত্রের আভাস ছিল-

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কথায় ষড়যন্ত্রের আভাস ছিল। রোবাবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এক সমােশে বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, মৃত্যু বারবার আমার পিছু ছুটেছে, কিন্তু আমি ভিতু ছিলাম না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ওই দিনের ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, একটার পর একটা গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।তারা ১৩টি গ্রেনেড তারা মেরেছে। আমার গায়ে রক্ত দেখে অনেকে ভেবেছে আমি আহত। আল্লাহর রহমতে আমার শরীরে কোনো স্প্লিন্টার লাগেনি। হানিফ ভাইয়ের গায়ে লাগে, তিনি রক্তাক্ত হন। প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়।

যারা মানুষ মারে, বাংলার মাটিতে তাদের স্থান নয়-

‘যারা সন্ত্রাসবাদ লালন করে, যারা মানুষকে হত্যা করে, যারা গ্রেনেড ছুড়ে মানুষ মারে, তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। এদের প্রতিরোধ করেই দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ রোবাবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণসভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের শক্তিই হচ্ছে বড় শক্তি। জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, জনগণ যদি রুখে দাঁড়ায় তাহলে আমরা বাংলাদেশকে এ ধরনের ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সারাজীবনই বাংলাদেশের মাটিতে হয়েছে। যেখানে জাতির পিতার মতো একজনকে হত্যা করতে পারে- যিনি স্বাধীনতা এনে দিলেন, আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিলেন, বাঙালি হিসেবে একটা জাতির মর্যাদা দিয়ে গেলেন, একটি রাষ্ট্র ও পতাকা দিয়ে গেলেন- তাকে পর্যন্ত এই মাটিতে হত্যা করা হয়েছে।’

যেভাবেই হোক বাংলার মাটি থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি কখনো মৃত্যুকে ভয় করি না। আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথাও নত করি না। একমাত্র আল্লাহকেই সেজদা দেই। আল্লাহর কাছেই মাথানত করি। আর কারো কাছে মাথা নত করি না। কারণ, আমি জাতির পিতার কন্যা। সেটা সব সময় মনে রাখি। আর জন্ম নিলে তো মরতে হবে। মৃত্যু যেকোনো সময় হতে পারে। কিন্তু মরার আগে মরতে রাজি না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন এই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে আমরা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলবই।’ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা এবং নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেন। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার যে ব্রত নিয়ে আমরা যে কাজ করছি, তা যেন করে যেতে পারি।’