উপজেলা নির্বাচন এবার হবে পাঁচটি ধাপে

নিউজ ডেস্ক: সংসদ নির্বাচনের পর দুই মাস বিরতি দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন; এবার ভোট হবে পাঁচটি ধাপে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের ঘরে নিতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে উপজেলা নির্বাচন যেন একতরফা না হয়ে যায়, সে কৌশল নিয়ে ভাবছে দলটি। সেজন্য ইতোমধ্যে উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে তিনজন করে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে জেলা কমিটিগুলো। চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে গড়ে প্রায় ৭-৮ জন করে প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। আবার আওয়ামী লীগও এই নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখছে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে বেশি প্রার্থীর অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে নিরুতসাহিত করা হবে না। ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোর আলাদা আলাদাভাবে নির্বাচন করার সুযোগ থাকছে। যার ফলে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করতে প্রার্থী ঘোষণা করছে বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবেন তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করবে না বোর্ড।’

তবে দলটি বিএনপির জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী, আর না এলে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের মতো ভিন্ন কায়দায় উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে চেয়ারম্যান পদটিও। তখন দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের অন্যদেরও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে। আওয়ামী লীগ একজনকে মনোনয়ন দেবে আর দলের অন্য কেউ প্রার্থী হতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন।

মাঠের রাজনীতিতে নিজেদের সক্রিয় রাখতে ভিন্ন কৌশলে দলকে সংগঠিত করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলটির নেতাদের ভাষ্য, নির্বাচনে কোন দল অংশ নেবে আর কোন দল অংশ নেবে না, সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে আওয়ামী লীগ সবসময়ই জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেও একটি অর্থবহ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে গুরুত্ব দেয়। সে অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে চায় দলটি।

পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ বাদে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে তেমন জোরালো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ৮টি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটও নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। শিগগির তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত জানাবে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা চলছে।

দলীয় সরকার বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আর কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না বলে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের “অভিজ্ঞতা” থেকে দলটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বর্তমানে দেশের ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। আইন অনুযায়ী, কোনো উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পূর্তির আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গতবার সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন হয়েছিল। এবারও আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে সংসদ নির্বাচনের পর দুই মাস বিরতি দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন; এবার ভোট হবে পাঁচটি ধাপে। চলছে দলীয় প্রতিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনি প্রস্তুতি।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ‘আট বিভাগের উপজেলাগুলোকে চার দিনে চার ধাপে ভোট করা হবে। বাকিগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কবে হচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে আরেকটি ধাপে ভোট শেষ করা হবে।সেক্ষেত্রে ৫ ধাপে ভোট করা হচ্ছে এবং উপজেলা ভোটেও জেলা সদর পুরোপুরি ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হবে।’

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ওই বছর ৪৬০টি উপজেলায় এই নির্বাচন হয়। ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ৪৬০টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। তৃতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে ৪৭৫টি উপজেলায়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে চতুর্থবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।