ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ২২ দিনের বিরতি শেষে নদীতে ইলিশ না পেয়ে হতাশ রাজবাড়ীর পদ্মা পাড়ের জেলেরা। যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। ১৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় গত বুধবার (৪ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়েছে মাছ ধরা। রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মায় তাই এখন জেলেদের ছড়াছড়ি।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার সময়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ সরকার যে সময়ে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে সেই সময়ে ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম। সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে হতে ইলিশের মৌসুমই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে জালে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলেরা।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় নদীর পাড়ে এবং বাজারেও ইলিশ মাছ কেনার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের ধারণা, দীর্ঘদিন ইলিশ না ধরায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা। আর ইলিশের দামও কম হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে উল্টো চিত্র দেখে ক্রেতারাও হতাশ।

দৌলতদিয়া মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ মাছ কেনার জন্য অনেক ক্রেতা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু যে পরিমাণ ক্রেতা এসেছেন সে তুলনায় বাজারে মাছের আমদানি একেবারেই কম।

পদ্মা পাড়ের একজন জেলে বললেন, ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না। সারা রাত জেগে থেকে ৫ কেজির মতো করে একেকজন মাছ পেয়েছি আমরা। এভাবে যদি মাছ না পাই তাহলে তো আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরে যাব। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা বলেন, দৌলতদিয়ার পদ্মায় প্রতিবছর যে পরিমাণ ইলিশ মাছ পদ্মায় ধরা পড়তো এবার তার অর্ধেক পরিমাণ মাছও মিলছে না।

এদিকে, বরাবরের মতো এবারও ট্রলারের চাপ পড়ায় বরফ উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে বরফ কলের মালিকরা। চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময় বরফ না পাওয়ায় বিপাকে পরেছেন জেলেরা।

বরগুনার তালতলীর ফকিরহাটের অন্যতম মৎস্য বন্দরে বরফ সংকটে ঘাটে শতাধিক ট্রলার নোঙর করে আছে। ঘাটে বসে অলস সময় পার করছেন শতাধিক মাছ ধরা ট্রলারের শ্রমিকরা। বরফ কলের মালিকরা বলছেন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও ভোল্টেজ কম থাকার কারণে বরফ উৎপাদনে বিঘ্ন হচ্ছে। এদিকে উৎপাদন কম হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বরফ। প্রতিটি ক্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ টাকা। অন্যসময় প্রতিটি ক্যান বিক্রি হয় মাত্র ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়।

স্থানীয় জেলে শামিম, হাসেম আলীসহ একাধিক জেলে বলেন, কোনোরকম জাল নিয়ে সাগরে যাওয়ার জন্য ট্রলার প্রস্তুত রেখেছি। কিন্তু বরফ নিতে না পারায় দুই দিনেও সাগরে যাওয়া যাচ্ছে না। ঘাটে অসংখ্য মাছ ধরা ট্রলার বসে আছে। এই দুইদিনেও বরফ পাইনি তবে আজ যদি না পাই তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে আমাদের। এমনিতেই ২২ দিন অনেক কষ্ট করে পরিবার নিয়ে ছিলাম। এখন বরফ না থাকায় ইলিশের ভরা মৌসুমেও সাগরে যেতে পারছিনা। বরফ কলের মালিকরা বলছেন বিদ্যুৎ যায় আর আসে তাই ঠিকমত বরফ তৈরি করতে পারছেন না, এজন্যই বরফ দিতে পারছেন না। যা দিচ্ছেন তাও এখন চড়া দামে বিক্রি করছেন মিল মালিকরা। তবে বরফ কলের মালিকরা বলছেন আজ রাতে বা আগামীকাল সকালে বরফ কিছুটা হলেও দেওয়া যাবে।