আমে লোকসান, আত্মহত্যা করলো এক ব্যবসায়ী!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা: স্বপ্ন বুননের আম এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লকডাউন ও সরকারী বিধিনিসেধে জেলায় এবার আমের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকরা আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে আমের দাম না পেয়ে জেলায় এক আম ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন।

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ বছর আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় অনেকে স্বপন বুনছিলেন গত বছরগুলোর লোকসান পুষিয়ে এ বছর লাভবান হয়ে নতুন কিছু করার। অনেকে স্বপ্ন দেখছিলেন বাড়ি মেরামত করে আরও যুগপোযোগী করার। আবার অনেকের স্বপ্ন ছিল ব্যবসা বাড়ানো। কিন্তু এসব স্বপ্ন এখন স্বপ্নই থেকে গেল। উল্টো এই আমই এখন চাষিদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর পুঁজি হারিয়ে পথে বসার মত অবস্থা হয়েছে।

ব্যবসায় লোকসান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গা এলাকার আম চাষি লালচাঁদ। আমের দাম না বাড়লে অবশিষ্ট আম নিয়ে আরও বিপাকে পড়বেন প্রান্তিক চাষিরা।

নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য হাসান আলী জানান, গত বুধবার তার ওয়ার্ডের আম ব্যবসায়ী লালচাঁদ আম ব্যবসায় লোকসানের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কয়েক দফা আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও গত বুধবার সকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

তিনি আরও জানান, আমে এভাবে লোকসান হতে থাকলে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন। অনেকে পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন।

চককীর্ত্তির আম চাষি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস জানান, তার ২০ লাখ টাকার পুরোটায় গত ৫ বছরে আমের ব্যবসা করতে গিয়ে শেষ করেছেন। এখন নিজের বাগানগুলোই শুধু পরিচর্যা করছেন। আম নিয়ে আর তিনি কোনো স্বপ্ন দেখেন না।

এদিকে লকডাউনের কারণে বাইরে থেকে ক্রেতা না আসায় আমচাষিরা বাধ্য হচ্ছেন ফেলা দামে আম বিক্রি করতে।

দেশের বৃহত্তম আম বাজারে আম বিক্রির জন্য আসা এক কৃষক জানান, তিনি গত বছর খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আম ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা মণ দরে বিক্রি করলেও এ বছর ক্রেতা না থাকায় স্থানীয় আড়ৎদারদের ১ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চাতরার আম বাগান মালিক মোজতাবা আলম বাদল জানান, তিনি কোনো বাগানই এ বছর বিক্রি করতে পারেননি। আম পেড়ে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে গড়ে ৭শ টাকা মণ দাম পাচ্ছেন তিনি। লেবার ও ভ্যান ভাড়া মিটিয়ে তার ৩শ টাকা থাকছে। আর বাগান পরিচর্যার খরচ সব লোকসান গেছে।

রানাহাটির এক আমচাষি বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে কানসাটে আম নিয়ে যাওয়ার সময় জানান, উপায় তো নেই। আম তো পেকে যাচ্ছে। দাম না থাকলেও তো বেঁচতে হবে।
অপরদিকে আমের আড়তদারদের দাবি তারা ৫০ থেকে ৫৫ কেজিদরে এবং কম দামে আম কিনেও আতঙ্কে আছেন। মোকামগুলোতে আমের দাম না পাওয়ায় তারাও বাধ্য হচ্ছেন কম দামে আম কিনতে।

শিবগঞ্জের আম আড়ৎদার আব্দুস সামাদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম শুনেই বাইরের মোকামগুলোতে দাম কমিয়ে দিচ্ছে। তাছাড়া বাইরের ক্রেতাও আসছেন না। তাই নিজেদের টাকায় ঝুঁকি নিয়েই আম কিনছেন তিনি।

কানসাট আম আড়ৎদার সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক টিপু জানান, বাজারে আম আসলেও বাইরের ক্রেতা কম। তাছাড়া এবার আমের সরবরাহ বেশি। তাই আম নিয়ে কিছুটা সংকট তো আছেই।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার এ্যান্ড কমার্স এর সাবেক পরিচালক আ. ওয়াহেদ আমের মূল্য না পাবার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বছর লকডাউনের প্রভাবে অন্তত ৫শ কোটি টাকার লোকসান হবে জেলার আম ব্যসায়ীদের।