আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে কোনো প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করবে ইরান: রাইসি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সবসময়ই এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। এ কারণে দেশটি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে আফগানিস্তানে সকল দল, মত ও পক্ষের অংশগ্রহণে ওই দেশটির বিরাজমান সমস্যা সমাধান করা যায় এবং দেশটিতে শান্তি ফিরে আসে। তাদেরকে এমন অবস্থায় পৌছতে হবে যাতে প্রতিবেশী কোনো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহীম রাইসি অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জের সঙ্গে টেলিফোনালাপে বলেছেন, ‘ইরান নিরলসভাবে ওই দেশটিতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এবং যে দেশই আফগানিস্তানে শান্তির জন্য উদ্যোগ নেবে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে তেহরান’।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তান বিষয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে দুদিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, ইরান ও আফগানিস্তান প্রতিবেশী দুই দেশ এবং এ কারণে আফগানিস্তানে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ঘা কিছুই ঘটুক না কেন ইরানের ওপরও তার প্রভাব পড়ে। দ্বিতীয়ত, ইরান গত চার দশক ধরে আফগান জনগণের দুঃখদুর্দশা লাঘবের জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বহু ক্ষেত্রে দেশটির পুনর্গঠনে তেহরান অবদান রেখেছে।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ খাতিব যাদেহ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা যেখানে যায় সেখানেই কেবল নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতিতে ঐসব লোকের জন্য বড় শিক্ষা রয়েছে যারা মনে করে আমেরিকা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে’। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা প্রমাণ করেছে নিজ স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই তারা বোঝে না এবং মিত্রদের স্বার্থ ও নিরাপত্তাও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আফগানিস্তানকে ক্ষয়ক্ষতি ও দারিদ্র ছাড়া আর কিছুই আমেরিকা দিতে পারেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন’।

যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের মতো আফগানিস্তানেও বহু বছর ধরে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল এবং বর্তমানে তারা সেনা প্রত্যাহার করলেও তাদেরকে অবশ্যই ওই অন্যায় কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা করতে হবে। এ ব্যাপারে ইরানের বিচার বিভাগের মানবাধিকার দফতর আজ সোমবার এক টুইটবার্তায় আফগানিস্তানে মার্কিনীদের অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, ‘শুধুমাত্র গত তিন বছরে মার্কিন সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ছয় হাজার ব্যক্তি এবং ৩২০টি শিশু হতাহত হয়েছে,। বার্তায় আরো বলা হয়েছে, পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো মার্কিন সেনাদের কোলে বসে থাকা একটি শিশুর ছবি প্রকাশ করে মার্কিন সেনাদের নানা অপরাধযজ্ঞ বিশ্ববাসীর কাছ থেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। অথচ কিছুদিন আগে এক মার্কিন সেনা এ কথা ফাঁস করে দিয়েছে যে, মার্কিন সেনারা মাইন পরিষ্কার করার কাজে আফগান অবুঝ শিশুদেরকে ব্যবহার করেছে।

গত ২০ বছর ধরে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ করার পর শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত অপমানজনকভাবে ওই দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এমন সময় তারা এতোবড় অপমানের স্বীকার হলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, আফগান যুদ্ধে তাদের ২৪০০ সেনা নিহত এবং প্রায় ২১ হাজার সেনা আহত হয়েছে। তাই সমস্ত সেনা প্রত্যাহারের পর ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের মতো বর্তমান যুগেও আমেরিকার আরেকটি পরাজয় বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্প্রতি পবিত্র হজ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে ভুল হিসাব নিকাশ করে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আফগান জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন করে এখন তারা বুঝতে পারছে চোরাবালিতে আটকা পড়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র: পার্সটুডে