আগোরায় লোভনীয় অফারে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ব িক্রি, মাসে বিক্রি ২ কোটি!

ঢাকা: একটি নিলে আরেকটি একদম ফ্রি! এমনকি যে পণ্যটি কিনবেন সেই পণ্যের সঙ্গে ফ্রি পণ্যটি বেঁধে জোড়া লাগিয়ে বিক্রির চেষ্টা চলছে আগোরায়। কেনো এতো অফার?

খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, অফার নয় এটা প্রতারণার ফাঁদ! ক্রেতা হট অফারে চট করে আগোরায় চলে গিয়ে ‍হতাশ হচ্ছেন। কেননা, পণ্যটি কিনতে গেলেই দেখা যাচ্ছে- এটা অনেক পুরনো পণ্য! শেষ হয়ে গেছে এর মেয়াদ। গত ঈদে যে পণ্যটি বিক্রির জন্য এসেছিলো এখন সেটি আরেকটির সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে আগোরা।

এমন অফারের শত শত পণ্যে ভরা আগোরার মগবাজারের আউটলেট। আবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যে অফার দেওয়া আছে বাস্তবের সঙ্গে সেই অফারের মিল নেই। পদ্মার তরতাজা ইলিশের লোভ দেখিয়ে ক্রেতা নিয়ে এলেও দেখা যাচ্ছে বরফ দিয়ে রাখা অনেক আগের ইলিশ।

মগবাজার আউটলেট ঘুরে আরও দেখা গেছে- পুরনো ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া নানা ফল, সবজি দিয়ে ভরা আগোরা। এমন অনেক পণ্য দেখা গেছে, যার গায়ে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। নেই বিএসটআই’র সিলও। এসব পণ্য আসল না নকল তাও বোঝার উপায় নেই।
আউটলেটের চেকিং কাউন্টারে কর্মরত তৃণা বলেন, ‘সরকারের নিয়ম মেনে কি বেচাকেনা করা যায়? নিয়ম নিয়মের মতোই থাকবে। ক্রেতাতো আসছেন বার বার। প্রতি মাসে ২ কোটির টাকার পণ্য বিক্রি করছি’।

ইলিশ কিনতে এসে ডাক্তার গলির বাসিন্দা লিয়াকত জামান বলেন, ‘পত্রিকায় দেখে এলাম, ইলিশের অফার চলছে। কিন্তু আউটলেটির সেলসম্যানরা বলছেন- অফার নেই’।
আউটলেটের একজন সেলসম্যন জানান, তিনি অফার সম্পর্কে কিছু্ই জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট ইলিশে অফার, বড়টিতে নয়।
এটা শুনে সেখানে উপস্থিত আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এটা তো প্রতারণা’।

মগবাজার আগোরার ফ্রিজের ভেতর থেকে বের করা একটি আইসক্রিমে দেখা গেছে, উৎপাদন বা মেয়াদোত্তীর্ণের কোনো তারিখ নেই।
আবার এখানে অনেক আমদানি করা পণ্য আছে, কিন্তু নেই বিএসটিআই’র সিল। মগবাজার কাজী অফিস রোডের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, বাইরের চেয়ে পণ্যের দাম বেশি –এটাই শুধু পার্থক্য। এছাড়া আর কোনো সুবিধা নেই এখানে।

মাছ দেখিয়ে তিনি বলেন, তাদের সাজিয়ে রাখা মাছ দেখে মনে হয় না, এগুলো ফ্রেশ হবে। দু’একদিনের পুরনো হতে পারে। কিন্তু অনেক দিনের পুরনো হলে তো ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে আগোরা।

মেয়াদোত্তীর্ণ পন্যের সমাহার আগোরায়:
বৃহস্পতিবার সকালে আগোরায় বিভিন্ন পণ্য দেখতে দেখতে চোখ কপালে! মিরিন্ডার ৪৫০ মিলি বোতল চোখে পড়লো, যার মেয়াদ এ মাসেই শেষ হয়েছে। উৎপাদনের তারিখ দেওয়া হয়েছে ৪ মাস আগের। এভাবে নতুন ও পুরনো পণ্য একসাথে মিশিয়ে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে। ফুড ফ্লেভার, কসমেটিকসেও দেখা গেছে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের ছড়াছড়ি।

আগোরায় রাখা মাছের মূল্যও বেশি রাখা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। ধানমন্ডির এক ক্রেতা সোবহান বলেন, বাইরের কাঁচাবাজারে টেংরার কেজি সাড়ে চারশ’ টাকা। কিন্তু এখানে সাড়ে পাঁচশ’। কাঁচাবাজারের তুলনায় বেশি মূল্য রাখার কারণেই এখান থেকে এখন মাছ ও গোশত কেনা সম্পূর্ণ বাদ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এর আগে সকালে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে জেনেটিক প্লাজা সংলগ্ন আগোরায় ম্যাক্স, ডু-ইট, এক্স-এর মতো বডি স্প্রে গুলোরও দেখা যায় মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। সবগুলো পণ্যেরই উৎপাদন ও আমদানির সময় ২০১৪ সাল। ভারত থেকে আমদানি করা লরেলের একটি শ্যাম্পুর বোতলে উৎপাদনের মেয়াদ ২০১৪ সাল দেখালেও মেয়াদোত্তীর্ণের কোনো তারিখ উল্লেখ নেই।

একই ব্র্যাঞ্চে থাইল্যান্ডের কিছু কসমেটিকস ও মাউথ ওয়াশও দেখা যায়। বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া এসব মাউথ ওয়াশ উৎপাদিত হয়েছে ২০১৪ সালে। বিক্রি না হলেও রেখে দেওয়া হয়েছে পণ্যগুলো।

ট্যাং, ফস্টরের মতো কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলো উৎপাদনের মেয়াদ এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিক্রি হয়নি। আবার নতুন পণ্যও আনা হয়নি। এছাড়াও আরও যেসব প্যাকেটজাত খাবার রয়েছে সেগুলোরও মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে।

মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি এবং অধিক মূল্যের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা গোণা আগোরার জন্যে নতুন কিছু নয়। দেশব্যপী তাদের সবগুলো আউটলেটকেই জরিমানা করা হয়েছে এসব অভিযোগে।

শুধু ভোক্তাদের নয়, কর্মীদেরও ঠকিয়ে চলেছে চেইন সুপারশপ আগোরা। টানা ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করছেন বিক্রয়কর্মীরা। অথচ কারও বেতনই ৮ হাজার টাকার বেশি নয়। চাকরি শুরুর পর বাড়ে না বেতনও। ক্ষোভ প্রকাশ করে কর্মীরা বলছেন, মালিকপক্ষ লাভ করে যাচ্ছেন, তবে তাদের অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। তার প্রভাব পড়ছে সেবায়ও।

রাজধানীতে আগোরার একটি ব্রাঞ্চে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বিক্রয়কর্মী জানান, ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে তিনি আগোরায় চাকরি করছেন। এখানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি। চাকরির সময় ৬ হাজার টাকা বেতনে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন, এখনো বেতন পাচ্ছেন ৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আগোরায় নিয়োগের সময় বলা হয়েছিল প্রতিবছর বেতন বাড়বে। ভালো কাজের জন্য বোনাসও দেওয়ার কথা। কিন্তু তার কোনোটাই হয়নি।