অল্প সময়ের মাঝে সারাবিশ্বে আমরা ঋণ দেবো: অর্থমন্ত্রী

অল্প সময়ের মাঝে সারাবিশ্বে আমরা ঋণ দেবো: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা এখন ঋণ করছি। তবে সময় বেশি বাকি নেই, ইনশাআল্লাহ, অল্প সময়ের মাঝে আমরা সারাবিশ্বে ঋণ দেবো। আমরা কিন্তু সেইভাবে এগুতে শুরু করেছি। আমাদের গভর্নর মহোদয় সব সময় আমাদের কো-অপারেট করছেন। আমরা মেগা প্রকল্পেও অর্থায়ন করছি। সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তেব্যে এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের জন্য অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০২০’ দেওয়া হয়।

অর্থমন্ত্রী ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের গলায় স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি গভর্নর ফজলে কবীর নগদ ৫ লাখ টাকা তার হতে তুলে দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ জুন মাসের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। টার্গেট অনুযায়ী ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে।

তিনি বলেন, আবারও বলি, আমাদের ঋণের পরিমাণ বেশি। আমরা ঋণ করে দেশ চালাচ্ছি। তবে সারাবিশ্বে সবচেয়ে আমাদের ঋণ কম। জিডিপির পরিমাণে আমাদের ঋণ সবচেয়ে কম। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ঋণ অনেক কম। ৩৬ থেকে ৩৭ শতাংশ আমাদের ঋণের পরিমাণ। এত কম ঋণের পরিমাণ আমাদের কারোরই নেই।

দেশের উন্নয়ন তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম জিডিপিতে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু কোভিডের কারণে সেটি অর্জন করেত পারিনি। তবে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে আইডিয়া করেছিলাম সেগুলা বেশিরভাগ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা কথা দিয়েছিলাম চলতি বছর শেষে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। কিন্তু সেটা করতে পারিনি।বর্তমানে এটা ৪৫ থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আমি বিশ্বাস করি চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে যেতে পারবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সোনার বাংলা বিনির্মাণে। আমরা বিশ্বাস করি আজকে যে ডেভলপমেন্ট জার্নি দেখছি, এটা হঠাৎ করেই এই অবস্থানে আসার বিষয় নয়। এখানে অনেকের অবদান আছে। জাতির পিতার পাঁচশালা পরিকল্পনা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দেখেছেন। সেখানে তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা রেখে গেছেন কিভাবে দেশের উন্নয়নে পরিকল্পনা করতে হবে, কিভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন নাই। জাতির পিতা সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন কিন্তু কাজটি তিনি করে যেতে পারেননি। আমরা তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। আজকে তারই অসমাপ্ত আত্মজীবনী সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছেন তারই রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে চলছেন। যাতে করে আমরা ২০৪১ সালে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেই সুবর্ণরেখাটি স্পর্শ করতে পারি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০২০ স্মারক বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুশাসনের ব্যখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৯০ দশকের শেষ ভাগের কথা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রথম টার্মে তখন উন্নয়ন বাজেটের আকার কি হবে তা নিয়ে তখনকার ভারপ্রাপ্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী এই দুজনে দুই ধরনের মতামত দিয়েছিলেন। এবং তা ছিল লিখিত আকারে, যুক্তি সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যখ্যা করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন।

‘পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যখ্যাটা ছিল কিছুটা সাপ্লাই সাইড ইকোনমিকসের তত্ত্বর মতো, বেশি খরচ করলে আয় বাড়বে চাহিদা বাড়বে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আর অর্থমন্ত্রীর বাজেটের বক্তব্য এবং যুক্তি ছিল যে বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি হলে বড় ঘাটতি অর্থায়ন হলে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি তৈরী হবে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উভয় ব্যখ্যা মনোযোগসহকারে পড়ে আমার পরামর্শ চেয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, কী পরামর্শ আমরা দিয়েছিলাম সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমি তখন খুব চমকিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে, এ ধরনের অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিতর্ক নিয়ে একজন সরকারপ্রধান নিজে পর্যালোচনা করেন। ওই দিন খুব সকালে নাকি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উঠেছিলেন। উঠে তিনি (দুই মন্ত্রীর) প্রতিবেদন পড়ে আত্মস্থ করতে চেয়েছিলেন। এরপর আমার কাছ থেকে আবার নিরপেক্ষ একটা মতামতও চাইলেন। আমার তখন মনে হয়েছিল আমরা সুশাসন যেটা বলি সেটার একটা আদর্শ দৃষ্টান্ত।

এ সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির আগামী চ্যালেঞ্জের বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা এখন উন্নয়নের নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছি। বিশ্ব অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে। উন্নয়নের পর্যায়ে আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ অনেক আছে।

এর মধ্যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উপযুক্ত শিক্ষা, অগ্রশিক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরি। যাতে জনমিতিক সুবিধার সুযোগ নিতে পারি। প্রশাসনের দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়ানো। বিশ্ব আর্থিক অস্থিরতা সামাল দেওয়ার জন্য উন্নত মানের আর্থিক খাত গড়ে তোলা এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিশ্ববাণিজ্যের প্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা শক্তি টিকিয়ে রাখতে বা আরও শক্তিশালী হতে এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের সামনে আছে।