অফিসগামী যাত্রীদের অসহায় অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দিকে সরকারি-বেসরকারি অফিস চলছে পুরোদমে, অন্যদিকে সরকারী বিধিনিষেধে গণপরিবহন আগের চেয়ে অনেক কম। এরইমধ্যে বলা হচ্ছে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কথা। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন অফিসগামী যাত্রীরা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা সকাল ও সন্ধ্যায় বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, বাসের দরজা বন্ধ থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঠেলে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টার মতো ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
গণপরিবহনের সংকট ছিল স্বাভাবিক সময়েও। চলমান বিধিনিষেধের সময় তা বেড়েছে। ঢাকা মহানগরের ভেতর প্রায় চার হাজার বাস চলাফেরা করে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। প্রতি বাসে আসনসংখ্যা গড়ে ৪০টি। সেই হিসাবে মোট আসন বা যাত্রী ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো। পাশাপাশি সকাল ও সন্ধ্যায় অফিসগামী যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যেতেও দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে বাসগুলো যাত্রী নিচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার।

ঢাকায় দৈনিক প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ যাত্রী পরিবহন হয় বলে দেখা গেছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা জাইকার কয়েক বছর আগে করা এক সমীক্ষায়। এই যাত্রীদের একটি বড় অংশ অফিসগামী। তাঁদের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

শাকিল আহমেদের অফিস মহাখালীতে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের ভাড়া ঠিকঠাক করছিলেন তিনি। শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমার বেশ বিড়ম্বনা হচ্ছে। বিআরটিসি বাসের জন্য লাইনে ১ ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়েও বাস পাইনি। এখন পাঠাও (মোটরসাইকেল সার্ভিস) দেখছি, তবুও পাওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘যাঁরা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাচ্ছেন, তাঁরা মহাখালী যেতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা চাচ্ছেন। প্রতিদিন এত টাকা দিয়ে যাওয়া আসা সম্ভব?’

হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মোহাম্মদপুরে মিডলাইন বাসের জন্য সকাল ১০টার দিকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাসের জন্য আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বাস একেবারেই নাই। এখন চাপ অনেক বেশি। এটিসিএলের মতো কয়েকটি সিটিং সার্ভিসও একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। বাসগুলো লক্কড়ঝক্কড় ছিল, কিন্তু যেতে পারতাম। এখন শুধু মিডলাইন চলে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘যাত্রী অর্ধেক বহন করার কারণে (অফিসগামী) যাত্রী যেতে পারছেন না। অনেকে বাসে ব্যারিকেড দিয়ে উঠতে চাচ্ছেন।’

গত কয়েক দিনে ঢাকা কলেজ এলাকা, শাহবাগ মোড়, যাত্রাবাড়ীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘আজ খিলক্ষেত এলাকায় অফিসগামী যাত্রীরা বাস ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশও উপায় না দেখে যাত্রী উঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী নেওয়ার।’

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এমনিতেই স্বাভাবিক সময়ে রাজধানী ও শহরতলিতে যানবাহনের সংকট লক্ষ করি। এর মধ্যে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল একটি ভুল ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মনে করেন, বাংলাদেশে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন পরিচালনা বাস্তবসম্মত নয়। এখানে বাসে শতভাগ আসনে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়া উচিত।