অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে

ঢাকা: ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মোট অনাদায়ী ঋণের ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর আগে একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক খেলাপির পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৭০৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা মোট অনাদায়ী ঋণের ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ বেড়েছে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ডিসেম্বর শেষে অনাদায়ী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ী ঋণ ছিল ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ছাড়া সরকারি বাণিজ্যিক, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের ঋণ অনাদায়ের পরিমাণ বেড়েছে।

গত বছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬ লাখ টাকা।

বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি কমায় সামগ্রিক খেলাপি ঋণ কমেছে। তবে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের ষষ্ঠ মাস শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৪৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকে ৪ হাজার ৯৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, বেসরকারি ব্যাংকে ২০ হাজার ৭৬০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও বিদেশি ব্যাংকে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। একই বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২২ হাজার ৭২৭ কোটি ২১ লাখ টাকা, ৫ হাজার ২৮৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ২৪ হাজার ৫৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ও ২ হাজার ১১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমান বেড়েছে ১ হাজার ১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এসময় খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসিক ব্যাংকের। সবচেয়ে বেশি কমেছে জনতা ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমান ২৩ হাজার ৭৪৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপির পরিমান ছিল ২২ হাজার ৭২৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ নতুন করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমান বেড়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ব্যাংকগুলোর পৃথক হিসেব থেকে দেখা যায় বেসিক, সোনালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমান বেড়েছে। কমেছে অগ্রণী, জনতা ও রূপালি ব্যাংকের। বেসিক, সোনালী ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নতুন খেলাপি ঋণের পরিমান যথাক্রমে ২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা এবং ১৮২ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, জনতা ও রূপালি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে যথাক্রমে ৪৯৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং ৯৩২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ও ৩৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ পুনর্গঠন, পুণ:তফসিল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ নির্দেশের কারণেই এত বিশাল অংকের খেলাপি ঋণ কমে গেছে।

খেলাপি ঋণ কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বছরের শেষে এসে ব্যাংকগুলো নমনীয়ভাবে ঋণ পুনঃতফসিল করে। এ কারণে খেলাপি ঋণ কমেছে। এছাড়া বছর শেষে ঋণ আদায়েও ব্যাংকগুলো তৎপর ছিল।’