ত্রিপুরা থেকে ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা বেশি দিয়ে বিদ্যুৎ আনছে বাংলাদেশ
নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ২ দশমিক ৫০ টাকা দাম পড়লেও ত্রিপুরার বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশকে দিতে হবে সাড়ে ৫ রুপি বা ৬ দশমিক ৪৩ টাকা করে। এতে একই দেশের বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি বাংলাদেশকে বেশি দিতে হচ্ছে ৩ দশমিক ৯৩ টাকা।
এ বেশি দর দেয়ায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, একই দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে দুই দর গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৫০ টাকা পড়লেও ত্রিপুরার বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশকে দিতে হবে সাড়ে ৫ রুপি বা ৬ দশমিক ৪৩ টাকা করে। এতে একই দেশের বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি বাংলাদেশকে বেশি দিতে হচ্ছে ৩ দশমিক ৯৩ টাকা। কিন্তু হিসাব অনুযায়ী ত্রিপুরার বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ২ দশমিক ৫০ টাকারও কম পড়ার কথা। তাছাড়া তারা বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতা হিসেবে এ বিদ্যুৎ দিচ্ছে। সে হিসেবে তাদের দাবি করে দাম নির্ধারণ করা অনুচিত।
জানা যায়, ত্রিপুরার পালাটানা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে বাংলাদেশ অংশে ২৭ দশমিক ৮ ও ভারত অংশে ২৪ কি:মি: সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের কুমিল্লার কসবা লাইন দিয়ে আগামী ২৩ মার্চ এই ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। এদিন প্রতিবেশী দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি শুরু করবে বাংলাদেশ। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় এ আমদানি-রপ্তানি শুরু হচ্ছে। এজন্য গত মঙ্গলবার বিকালে বিদ্যুৎ ভবনে উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৩ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও ব্যান্ডউইথ সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তবে এর আগে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে বিদ্যুৎ না কিনলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হতো। এবার সেই ক্যাপাসিটি চার্জ থাকছে না। এবারের চুক্তিতে ভারত যখন বিদ্যুৎ দেবে, বাংলাদেশ তখনই টাকা পরিশোধ করবে। তাছাড়া বাংলাদেশ যখন যতটুকু বিদ্যুৎ আমদানি করবে ঠিক সে পরিমাণেরই বিল পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ না নিলে কোনো বিল দিতে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগরতলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে ৭২৬ মেগাওয়াটের পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করছে ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি)। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য যাবতীয় ভারী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী মানিক দে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করলে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। সেই প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক দরে এ বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এই বিদ্যুৎ আমদানির মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। ভারত প্রথমে ত্রিপুরার বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৮ রুপি করে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাতে সম্মত হয়নি। সেজন্যই বিদ্যুৎ আমদানি সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে দর কষাকষির পর ভারত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ রুপি করে দিতে সম্মত হওয়ায় ২৩ মার্চ ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে।