‘ব্রোকলি’তে স্বপ্ন দেখে বিদেশ ভুললেন

‘ব্রোকলি’তে স্বপ্ন দেখে বিদেশ ভুললেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন মাহমুদ রানা (৩৫)। সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন বছর ছয়েক আগে। এরপর বেকার হয়ে পড়ায় রানা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে দেশীয় শাক-সবজি চাষ শুরু করেন।

গত কয়েক মৌসুমে ব্রোকলি চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছেন রানা। তাই বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়ে তিনি এখন নিজের দেশে থেকে গাঢ় সবুজ ব্রোকলি চাষে স্বপ্ন দেখছেন।

সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মেইটকা গ্রামে গিয়ে জানা যায়, শুধু মাহমুদ রানাই নয় এই সবজি চাষ করেন মাহফুজ, ফিরোজ মিয়া, আলামিন ও কাইউমসহ অনেকে। এতে ভাগ্য ফিরেছে তাদের।

গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, জমির পর জমি শুধু ব্রোকলি চাষ করা হচ্ছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু ব্রোকলির নীল রঙের পাতা। কৃষকরা নিজ নিজ জমিতে নিজেদের মতো ব্রোকলি গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

মাহমুদ রানা বলেন, গত কয়েক বছরে আমাকে দেখে আরও অনেক কৃষক ব্রোকলি চাষ শুরু করেন। আগামী বছরে আরও ২-৩ বিঘা বেশি জমিতে ব্রোকলি চাষ করবো। এক সময়ে অচেনা থাকা এই সবজিটি এখন এখানের সাধারণ মানুষের কাছে খুবই চেনা। দিনরাত আমি এবং আমার স্ত্রী আকলিমা ব্রোকলি ক্ষেতেই শ্রম দিচ্ছি।

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসার পর বিদেশ যাওয়ার কথা ভাতাম। কিন্তু এখন বিদেশ যাওয়ার কথা চিন্তায় করি না। কারণ সবজি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছি। এ সবজি চাষ করে আমার পুরো সংসার এখন ভালোভাবেই চলছে। রাজধানীর হোটেল ও বাজারগুলোতে যত চাইনিজ সবজি আছে সব আমাদের এখান থেকেই সরবারাহ করা হয়। পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ ব্রকলির বাজারে ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে।

আরেক চাষী আলামিন বলেন, শীতকাল চলে গেলেও ব্রোকলি চাষ করা সম্ভব। শীতকালে একটু ফলন ভালো হয়। গরমের মধ্য একটু ফলন কম হলেও সবজিটির দাম ভালো পাওয়া যায়। প্রতিটি ব্রোকলি ৮০/১০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো সরাসরি ঢাকার কাওরানবাজার, পুরান ঢাকাসহ নানা বাজারে বিক্রি হবে। ব্রকলি চাষে খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি।

সবজির ওপর নির্ভর করে মাইট্টা গ্রাম টিকে আছে বলে জানিয়ে কাউম নামে আরেক চাষী বলেন, আমাদের এখানে অনেক প্রকার সবজি চাষ করা হয়। তারমধ্যে চেরি টমেটো, ক্যাপসিকাম, অ্যাসপারাগাস, সুইটকর্ন, ব্রোকলি, বেবি কর্ন, আইজ বাক লেটুস, বিট রুট, থাই আদা, থাই পাতা, স্কোয়াশ, নীলাপাতা, বানচিং অনিয়ন, রেড ক্যাবেজচাষ হয়।

তিনি বলেন, ঢাকার রেস্তোরাগুলো আমাদের উৎপাদিত সবজি দিয়েই চলে। আমাদের এখানকার উৎপাদিত সব সবজিই ওই রেস্তোরাগুলোই কিনে নেয়। আমরা যদি কৃষি ঋণ পেতাম তাহলে আরও বেশি জমিতে চাষ করতাম।

সাভার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, সাভারে এবার প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে এই উচ্চ মূল্যসম্পন্ন সবজি চাষ হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ সবজিগুলোর প্রসার বাড়ছে। নতুন এই সবজি কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন কৃষকরা। খুব দ্রুত এসব সবজি কৃষি অ্যাপের আওতায় আনা হবে। এছাড়া কৃষকদের সব ধরনের সহয়তা দেওয়া হচ্ছে।