যাকাত না দেওয়ার কঠিন পরিণতি

মুসলমান উনাদের জন্য সম্মানিত যাকাত একটি ফরয ইবাদত। প্রত্যেক ছাহিবে নিসাব উনার জন্য বছরে একবার যাকাত দেয়া ফরয। যার উপর যাকাত ফরয তাকে যাকাত দিতেই হবে। এর থেকে ফিরে থাকার কোন উপায় নেই। এখন কেউ যদি যাকাত ফরয হওয়ার পরও না দেয় তার কঠিন পরিণতি সম্পর্কে একটি ওয়াকেয়া (ঘটনা) উল্লেখ করা হয়।

যাকাত ফরয হয় ৮ম হিজরীতে। যাকাত ফরয হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পাঠিয়েছিলেন যাকাত আদায়ের জন্য। যাকাত আদায়ের ধারাবাহিকতায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সালাবা ইবনে হাতিম নামে এক ব্যক্তির কাছে গেলেন, যে নিজেকে মুসলমান দাবী করতো। তাকে যখন যাকাত প্রদানের কথা বলা হলো তখন সে বললো আমিতো মুসলমান-আমি কেন যাকাত দিবো। এটাতো জিজিয়া করের মত মনে হচ্ছে। সে বললো, আপনারা অন্য জায়গা থেকে যাকাত আদায় করে নিয়ে আসুন। আমি চিন্তা করে দেখি। পরে যখন তার কাছে যাওয়া হলো তখন সে সরাসরি অস্বীকার করলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিষয়টি জানালেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তার থেকে যাকাত গ্রহণ করা হবে না। তার এক আত্মীয় তাকে জানালেন, তুমি কি বলেছ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমার ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তখন সে তাড়াহুড়া করে যাকাতের টাকা নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলো। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর তার যাকাত গ্রহণ করলেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফতকালে সে যাকাতের টাকা নিয়ে উনাদের খিদমতে এসেছিল কিন্তু উনারা কেউই তার যাকাত গ্রহণ করেননি। যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং তার থেকে যাকাত গ্রহণ করেননি। এরপর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে সে মারা যায়। এই ঘটনার মধ্যে অনেক ইবরত -নছীহত আছে। আমি শুধু একটি কথাই বলবো, তার আর্থিক অবস্থা তেমন স্বচ্ছল ছিল না বলে আরো বেশি খিদমত করার কথা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া চায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বললেন। কিন্তু তার উপুর্যপুরি আরজির প্রেক্ষিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দোয়ার বরকতে তার সম্পদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে পাহাড়সম হয়ে গেল। এখন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন তখন সে সরাসরি অস্বীকার করলো কারণ তার সম্পদ কমে যাবে। যে সম্পদ দ্বারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করার কথা ছিল সে একটি ফরয আমল অস্বীকার করার কারণে তার ইমানই রক্ষা হলো না। অর্থাৎ সে কাফির হয়ে মৃত্যবরণ করলো। তার অঢেল সম্পদ পড়েই রইলো। পাঠক, আপনি নিজেই চিন্তা করুন আপনার অনেক সম্পদ আপনি সব রেখেই কবরে চলে গেলেন। যে সম্পদ দ্বারা আপনি সীমাহীন মর্যাদা হাছিল করতে পারতেন-বখীলতির কারণে সেই সম্পদই আপনার জাহান্নামী হওয়ার কারণ হলো। নাউযুবিল্লাহ!

জাহান্নামে আপনার এই সম্পদকে বিভিন্ন বিকট ছূরত দিয়ে আপনাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আপনি কবরে মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গা পেলেন থাকার জন্য-সাথে বর্ণনাতীত শাস্তি। আর আপনার মুহব্বতের পাহাড় পাহাড় সম্পদ পড়েই রইলো। সঙ্গে এক পয়সাও নিতে পারলেন না। এই অঢেল সম্পদ আপনার কোন কাজেই আসলো না। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে সঠিকভাবে সম্মানিত যাকাত আদায় করা এবং হক্বস্থানে পৌঁছানো। নিজেরটা নিজেরই করে যেতে হবে। এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন-সম্মানিত যাকাত সঠিকভাবে আদায় এবং হক্বস্থানে পৌঁছানোর মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতী করবেন, নাকি নিজের সম্পদকে নিজেকেই শাস্তি দেওয়ার জন্য জাহান্নামের ইন্ধন বানাবেন। একটি কথা না বললেই নয়, যারা যাকাত দেয় না তাদের অন্তরে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত নেই। যদি উনাদের মুহব্বত তার অন্তরে থাকতো তাহলে সম্মদের মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে যাকাত দেয়া থেকে বিরত থাকতো না। সুতরাং দেখা যাক কার মুহব্বত আপনার অন্তরে বেশি প্রবল। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত নাকি টাকা-পয়সার মুহব্বত!