ইয়াবাসেবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে

মাদকের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সেবনের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ইয়াবা। যা পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে। এই ইয়াবা ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের যুব প্রজন্মকে। জানা গেছে, দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ইয়াবা আসক্তির শিকার। যার মধ্যে ৮৪ ভাগই পুরুষ।

সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, পুরুষের পাশাপাশি বাংলাদেশে বাড়ছে ইয়াবাসেবী নারীর সংখ্যাও। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, অনেক নারীই অন্যদের পাল্লায় পড়ে কিংবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর অনেক নামি স্কুল-কলেজের মেয়েরা মাদকে আসক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যম এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সব ধরনের পরিবারের নারীরাই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী যেমন রয়েছেন তেমনি আছে বিবাহিত নারীও। তবে কী পরিমাণ ছিন্নমূল বা নিম্নবিত্ত পরিবারের নারী মাদকাসক্ত সে বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। স্কুলের বাথরুমে কিংবা কমনরুমে তারা মাদকের বিনিময় করে। প্রথমবার সরবরাহকারী অন্যদের বিনামূল্যে মাদক গ্রহণের সুযোগ দেয়। অন্যদিকে বিবাহিত নারীরা পারিবারিক জীবনের হতাশা থেকে মাদকের দিকে ঝুঁকছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষ-নারী সবাই নানা কারণে মাদকাসক্ত হতে পারে। এর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, কৌতুহল, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনের পাল্লায় পড়া, নিজের ইচ্ছায়, হতাশাবোধ, পারিবারিক হতাশা, মাদকের সহজলভ্যতা ইত্যাদি কারণসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এদের ৮৪ ভাগ পুরুষ ও ১৬ ভাগ নারী। তবে নারীদের এই হার দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে নারী মাদকাসেবীর সংখ্যা বাড়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন- মাদক গ্রহণ করে ওজন কমানোর প্রবণতা, কৌতুহল, স্বামী, ছেলেবন্ধু কিংবা পরিবারের কাছের মানুষ দ্বারা বাধ্য হওয়া, পারিবারিক কলহ, যৌন নির্যাতনের শিকার, হতাশা, খুব বেশি আবেগপ্রবণতা ইত্যাদি।

তথ্য অনুযাযী, গত ৫ বছরে দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের পরিচালনায় ২০১৭ সালে মাদকাসক্ত নারীদের ওপর চালানো এক জরিপের ফল থেকে দেখা গেছে, নারী মাদকসেবীদের ৫৬ শতাংশই ইয়াবাসেবী। এছাড়া ঘুমের ওষুধ নেয় ৩৩ শতাংশ নারী, সিগারেট ৩২ শতাংশ, মদ ২৮ শতাংশ, গাঁজা ২৬ শতাংশ, ফেনসিডিল ৯ শতাংশ , হেরোইন ৫ শতাংশ, পেথেড্রিন ৩ শতাংশ এবং ১ শতাংশ নারী ড্যান্ডি নিয়ে থাকে।

গবেষণা বলছে, কোনো পরিবারে পুরুষ মাদকাসক্ত হলে নারীর তুলনায় তাকে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে দেশে মাদকসেবী নারীরা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় মাদকাসক্ত হলে তাদের শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি বেশি থাকে। এ কারণে তার বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চিকিৎসা পরবর্তী ফলোআপ সেবা ও সঠিক সহযোগিতা না পেলে সে আবার মাদকাসক্ত হতে পারে।

দীর্ঘদিন মাদক গ্রহণের কারণে একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক– দুই ধরনের ক্ষতি হয়। এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, মাদক পুরুষ-নারী সবারই ক্ষতি করে। দীর্ঘদিন মাদক নিলে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভার, ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়। আর যেহেতু নারীদের উর্বরতা বা সন্তান জন্ম দেওয়ার একটা বিষয় থাকে, মাদক গ্রহণে সেটা বাঁধাগ্রস্ত হয়। গর্ভাবস্থায় মাদক গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।