বিতর্ক সৃষ্টিতে সিনহার নতুন মাত্রা

সরকারে প্রতি চরম ঔদ্ধত্য ও অকৃতজ্ঞ বিচারক সিনহা দাবি করেছে, বিচার বিভাগের স্বার্থে, বিচার বিভাগ যাতে কোনোভাবে কলুষিত না হয় সে জন্যই নাকি সাময়িকভাবে সে বিদেশে যাচ্ছে। সে আরো দাবি করেছে, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’ সাংবাদিকরা প্রধান বিচারককে প্রশ্ন করতে চাইলে সে এসময় একটি লিখিত বক্তব্য দিয়ে সে বলেছে, এখানে সব লেখা আছে। লিখিত বক্তব্যে সিনহা মিথ্যাচারপূর্ণভাবে দাবি করেছে- “আমি সম্পুর্ণ সুস্থ আছি। ইদানীং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবি ও বিশেষভাবে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমি বিশ্বাস। সেই সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিতও বটে।
কারণ প্রধান বিচারকর কার্যভার পালনরত প্রবীণতম বিচারকের উদ্ধৃতি দিয়ে আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারকের প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারকের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।”
এক মাসের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে জুমুয়াবার দিবাগত রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে ঢাকার হেয়ার রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে বিমানবন্দরের পথে গাড়িতে উঠার আগে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বিচারক সিনহা এসব মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প উদগীরণ করেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে বাসভবন ত্যাগ করেছে।
জানা গেছে, এর আগে তার বাসায় যান বিচারকের দফতরের হিসাবরক্ষক। গত দুই সপ্তাহ ধরেই প্রধান বিচারকের বিদেশে যাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছিলো। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারকের ছুটিতে দেশের বাইরে যাওয়ার আবেদনে স্বাক্ষর করেন। গত বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি। তারপরই প্রধান বিচারকের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে (সরকারি আদেশ) জিও দেয়া হয়।
২৫ দিনের অবকাশ শেষে ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার দিনই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১ নভেম্বর-২০১৭ পর্যন্ত এক মাসের ছুটিতে যায় চরম বিতর্ক সৃষ্টিকারী সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এর মধ্যেই প্রধান বিচারক সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ৫ বছরের ভিসার জন্য দূতাবাসে আবেদন করে। সেখানে তাদের বড় মেয়ে সূচনা সিনহা অবস্থান করছে। তাদের ৩ বছরের ভিসা দেয় অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস। এরপর মঙ্গলবার সে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করে। ওই চিঠিতে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারক অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চায় বলে উল্লেখ রয়েছে।