তুরস্কের জনগণ জীবন দিয়ে এরদোগানের ক্ষমতা রক্ষা করার নেপথ্যে কারণ

ডেস্ক: সম্প্রতি তুরষ্কে আকষ্মিক সেনাঅভ্যুথান ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির জনগণ স্বতঃস্ফূতভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে এবং ট্যাঙ্কের নিচে শুয়ে পড়ে থামিয়ে দিয়েছে একটি প্রিপ্ল্যান সেনা অভ্যুথান। কিন্তু কেন জনগণ জীবনের ঝুকি নিয়ে এরদোগানের পক্ষে নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত হলো ? এরদোগান জনগণের জন্য কি করেছিলো?

তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ক্ষমতায় এসে তুরষ্কের ব্যাপক উন্নতি সাধণ করে। বলতে গেলে তুরষ্কের চেহারাই পাল্টে দেয়। যার কারণে এরদোগানের প্রতি তুরষ্কের জনগণের এত দরদ এবং জনগণ জীবন দিয়ে হলেও এরদোগানকে রক্ষা করতে চায়। আসুন দেখি, এরদোগান জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে কিভাবে তুরষ্কের উন্নয়ন সাধণ করে-

ইস্তানবুলের মেয়র (১৯৯৪-১৯৯৮) পদে ইস্তানবুলের উন্নয়ন:
এরদোগান ১৯৯৪-৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তানবুলের মেয়র হিসেবে তার দায়িত্ব শুরু করে। সে সময় ইস্তানবুলের বড় সমস্যা ছিলো ট্রাফিক জ্যাম, পানির সংকট এবং বায়ু দুষণ ও আবর্জনা সমস্যা। ৫০টি ব্রীজ, রাস্তা বা রেলপথের জন্য দীর্ঘ সেতু, এবং হাইওয়ে তৈরী করে জানজট দূরে করেন। কয়েকশ’ কিলোমিটার লম্বা পাইপ লাইন সংযুক্ত করে পানির সমস্যা দূর করেন, রিসাইকেল সিস্টেমে আবর্জনা সমস্যা দূরীকরণ, প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে বায়ুদূষণ রোধকরণ করে। ইস্তানবুলের মেয়র থাকা অবস্থায় দুর্নীতি দূর করে, শহরের জন্য নির্ধারিত বাজেট যেন সঠিক উপায়ে ব্যবহৃত হয় সেটা নিশ্চিত করেন। সে শহরের ২ বিলিয়ন ডলার ‍ঋণ পরিশোধ করে এবং ৪ বিলিয়ন ডলার শহর উন্নয়নে ব্যয় করে।

প্রধানমন্ত্রী (২০০৩-২০১৬) পদে দেশের উন্নয়ন:
১৯৯৯ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এছাড়া ২০০২ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা লাগে তুরষ্কে। সেখান থেকে এরদোগান দেশটির অর্থনীতিকে উদ্ধার করে। ১৯৯৫ সালে যেখানে তুরষ্কের জিডিপি ছিল ডি-৮ দেশগুলোর অন্যতম সদস্য বাংলাদেশের আজকের জিডিপির সমতুল্য – অর্থাৎ ১১৬ বিলিয়ন ডলার। ১৬ বছর পর ২০১২ সালে তুরষ্কের জিডিপি ৬ গুন বেড়ে হলো ৮০০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমল গুল ঘোষণা দেয় (যখন প্রধানমন্ত্রী এরদোগান) – আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে তুরষ্ক ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করবে তুরষ্ক। ব্যাপক উন্নয়ন করায় জনসমর্থন থাকায় পর পর তিন বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয় এরদোগান। কিন্তু একজন তিন বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, তাই বাধ্য হয়ে থাকে ক্ষমতা থেকে সরে প্রেসিডেন্ট পদে আসতে হয় তাকে।