‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’: ইমাম হত্যায় প্রতিবাদের ঝড় আমেরিকায়

ডেস্ক: আমেরিকার নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি খুনের ঘটনায় সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। ঘটনাস্থলে হাজার হাজার বাংলাদেশী সমবেত হয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে প্রকৃত খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। সমাবেশে একটিই শ্লোগান ছিলো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ইমাম আলাউদ্দিন আকনজি হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। খবর ইউএনএ’র।

জানা গেছে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত ওজনপার্কের লিবার্টি এভিনিউ ও ৭৯ স্ট্রীটের কোনায় প্রকাশ্য দিবালোকে দু’জন বাংলাদেশীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। খুব কাছ থেকেই তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এর আগে দুর্বৃত্তদ্বয় জানাতে চায় ‘হু ইজ ইমাম’ (ইমাম কে?)। তাদের প্রশ্নের উত্তরে ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি সহজ-সরল ভাষায় দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন “আই অ্যাম ইমাম”। এরপরই দুর্র্বৃত্তরা প্রথমে ইমাম আলাউদ্দিনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং পরে তারা মিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থলে মারা যান স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও খতিব আলাউদ্দিন আকুনজি।

এ সময় তিনি মসুল্লীদের সঙ্গে মসজিদ থেকে জোহরের নাম আদায় করে বাসার দিকে ফিরছিলেন। ঘটনার সময় ইমামের সাথে থাকা মুসল্লি ও স্থানীয় বাসিন্দা তারা মিয়াও গুরুতর আহত হন। তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তি করে লাইফ সাপোর্টে রাখার কয়েক ঘন্টা পর তিনি মারা যান।

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকায় নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেয় এনওয়াইপিডি’সহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী। দৃর্বৃত্তদের মধ্যে একজন স্প্যানীশ আরেকজন কৃষ্ণাঙ্গ বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা যায়নি।

এদিকে ইমাম সহ দু’জনকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তের গুলির ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘হেইট ক্রাইম’ সংক্রান্ত বক্তব্যের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোন মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হলো।

অপরদিকে ঘটনার পরপরই নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মূলধারার রাজনীতিবিদরা।

শোকাহত পুরো কমিউনিটি। জোহরের নামাজের পর প্রকাশ্য দিবালোকে এ ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না, বাংলাদেশী’সহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি আল ফোরকান জামে মসজিদে তিন বছর ধরে ইমামতি করে আসছিলেন। প্রতিদিনের মতো শনিবার জোহরের নামাজ শেষে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ হারান মসজিদের ইমাম। আগামী ২৩ আগষ্ট ইমাম আলাউদ্দিনের বাংলাদেশে যাওয়ার কথা ছিলো। এজন্য তিনি প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। আসছে কোরবানীর ঈদ দেশের মাটিতে পরিজনদের সঙ্গে কাটানোর ইচ্ছে ছিল তার।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তারা মিয়ার মরদেহ স্থানীয় জ্যামাইকা মেডিক্যাল সেন্টারে (হাসপাতাল) রয়েছে। তাদের মরদেহ নিউইয়র্কে নাকি বাংলাদেশে দাফন করা হবে এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনে ইমাম আলাউদ্দিন অমায়িক, ভদ্র ও নিরহংকারী মানুষ ছিলেন বলে এলাকাবাসীরা জানান।

ঘটনার পরপরই পুরো মসজিদ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঘটনার তদন্তে এনওয়াইপিডি’র বিশেষ টিম মসজিদ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করছেন। সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুখপাত্র টিফানী ফিলিপস ঘটনাস্থলেই ইমাম খুনের ঘটনা সম্পর্কে মিডিয়াকে অবহিত করেন।

প্রবাসী বাংলাদেশী ইমাম খুনের খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। এ সময় তিনি ঘটনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশীরা হেইট ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। বিষয়গুলো কনস্যুলের পক্ষ থেকে সিটি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করে প্রতিকার দাবি করা হয়েছে। কনসাল জেনারেল হতাহতদের পরিবারের জন্য কনস্যুনেলেটের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রতিবাদ সমাবেশ
ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি হত্যার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র সভাপতি বদরুল হোসেন খান, সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট এডভোকেট মোহাম্মদ এন মজুমদার, মুজাহিদুল ইসলাম, আব্দুল শহীদ, কবীর চৌধুরী, মিসবা আবদীন, আবু নাসের, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ইমাম আব্দুল মালিক, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনাটিকে হেইট ক্রাইম হিসেবে অবহিত করে প্রকৃত হত্যাকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। সমাবেশে একটিই শ্লোগান ছিলো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। শত-সহস্র প্রবাসী বাংলাদেশি এই সমাবেশে যোগ দেন।