প্রধানমন্ত্রীর বিমান অবতরণে ৩১ মিনিট বিলম্ব নিয়ে রহস্য

ঢাকা: পাঁচ দিনের সৌদি সফর শেষে দেশে ফিরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি। আর এ দুর্ঘটনা এড়াতে বিমানটিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশে অন্তত ৩১ মিনিট চক্কর দিতে হয়েছে।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের আগে এসএসএফ বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। সেদিন রানওয়ে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এসএসএফ সদস্যরা দেখতে পান রানওয়ের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মেটালিক বস্তু পড়ে আছে। এসব বস্তু দেখে তারাও আঁতকে ওঠেন। বিমানটি অবতরণের আগ মুহূর্তে কন্ট্রোল টাওয়ারের মাধ্যমে ফ্লাইটটি অবতরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)।

বিষয়টি ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন জামিলকে জানানোর পরই মুহূর্তে পাইলট বিমানটি অবতরণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। পরে উপায়ান্তর না দেখে আকাশে চক্কর দিতে থাকে। প্রায় ৩১ মিনিট আকাশে চক্কর দেয়ার পর ৭টা ৫০ মিনিটে অবতরণের অনুমতি পান পাইলট।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রানওয়ে থেকে যেসব মেটালিক বস্তু অপসারণ করা হয়েছে সেগুলো না সরালে ফ্লাইটটি ল্যান্ড করার পর বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা ছিল।

উড়োজাহাজের চাকা ফেটে গিয়ে জাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়তে পারত। মেটালিক বস্তুগুলো উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ঢুকে যেতে পারত। এতে আগুনও ধরার সম্ভাবনা ছিল।

এছাড়া চাকার সঙ্গে ঘর্ষণেও উড়োজাহাজে আগুন ধরে বড় ধরনের ক্রাশ হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। তাদের মতে, এসএসএফের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় অল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ওই ভিভিআইপি ফ্লাইটটি রক্ষা পেয়েছে। পরে এসএসএফ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে এসব মেটালিক বস্তু সরিয়ে নেয়ার পর ফ্লাইটটিকে অবতরণের সংকেত বার্তা পাঠান ককপিটে। তারপর রাত আটটার দিকে সেটা নিরাপদে অবতরণ করে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হওয়া সরকারের মন্ত্রী ও ভিআইপিরা এ খবর জেনে আঁতকে ওঠেন। এ সময় একাধিক মন্ত্রী জানতে চান, রানওয়ে ক্লিয়ার রাখা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব কার?

এঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আবারো প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট অবতরণ হবে সেখানে রানওয়েতে ঝুঁকিপূর্ণ এ ধাতব বস্তুগুলো কীভাবে আসলো এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বড় ধরনের কোনো নাশকতার লক্ষে পরিকল্পিতভাবে কেউ এটা করছে কি না এমন প্রশ্নও কারো কারো মনে দেখা দিয়েছে।

যদিও দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআরের একটি এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন থেকেই ওই মেটালিক বস্তুগুলো রানওয়েতে পড়েছিল।
সিভিল এভিয়েশনের অ্যারো এটিএস (এয়ার ট্রাফিক সিস্টেম) বিভাগের উচিত ছিল রানওয়ে থেকে মেটালিক বস্তুগুলো অপসারণ করা। কিন্তু অভিযোগ আছে, ভিভিআইপি ফ্লাইট আছে জেনেও এটিএস বিভাগ তা করেনি।

আর বাংলাদেশ বিমানের নতুন কেনা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন এভাবে বিকল হওয়া বা ইঞ্জিনের ভেতর থেকে ধাতব টুকরা ছিটকে পড়াটাও অস্বাভাবিক বলে মনে করেন বিমানের কর্মকর্তারা।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনায় আবারও শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সিভিল এভিয়েশনের গাফিলতি ও দৈন্যদশার চিত্র ফুটে উঠেছে।
জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের এটিএস আর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী ও সদ্য গঠিত এভসেক সেল বিমানবন্দরে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছেন। সিভিল এভিয়েশনের মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা এভসেক সদস্যদেও পেশাগত কর্মদক্ষতা ও দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সাধারণ নিরাপত্তা বিভাগের পাশাপাশি অতিরিক্ত ইউনিট হিসেবে এভসেক মোতায়েন করার পরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একাধিক মন্ত্রী ও ভিআইপি।

জানা যায়, অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের আগেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাত দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে এভসেক গঠন করেন মেম্বার অপারেশন। উচ্চ বেতনের নিয়োগপ্রাপ্ত এসব সদস্য নিরাপত্তার কাজের চেয়ে বসে বসে অলস সময় কাটান, আর সাধারণ নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর খবরদারি করেন। এ নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় শাহজালালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও জানান দায়িত্বরতরা।