প্রাকৃতিক দুর্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি ৩১ হাজার কোটি ডলার

ডেস্ক: ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গত বছরটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক একটি বছর। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সে সাফল্য একটি বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গেল বছরে তিনটি শক্তিশালী হারিকেন, দাবানল, শিলাবৃষ্টি, বন্যা, টর্নেডো, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার; যা ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্কের বার্ষিক জিডিপির সমান। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সামুদ্রিক ও পরিবেশ প্রশাসন-ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) সোমবার এ আশঙ্কাজনক তথ্যগুলো সামনে নিয়ে আসে। খবর টাইম ও ইউএসএ টুডে।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ১৬টি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিটি দুর্যোগেই অন্তত ১০০ কোটি ডলারের বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক বছরে দুর্যোগের সংখ্যার দিক থেকে ২০১১ সালের সমান হলেও ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে অতীতের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষতি হয়েছিল ২০০৫ সালে। জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কালে হারিকেন, ঘূর্ণিঝড়সহ বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশটির ক্ষতি হয়েছিল ২১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। গত বছর এ ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

১৯৮০ সাল থেকে দেশটির বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব রেখে আসছে এনওএএ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পাঁচটি হারিকেনের তিনটিই আঘাত হেনেছে ২০১৭ সালে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৩৬২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

২০১৭ সালে আঘাত হানা হারিকেন হার্ভির ফলে ক্ষতি হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০০৫ সালে আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ক্যাটরিনার পরই রয়েছে হার্ভি। এনওএএ জানায়, হার্ভি-পরবর্তী বৃষ্টিপাতের ফলে দেখা দেয়া বন্যায় অন্তত ৩০ হাজার লোক বাস্তুচ্যূত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয় দুই লাখ বাড়িঘর, অফিস-আদালত।
গেল বছরে আঘাত হানা আরেক হারিকেন মারিয়ার ফলে ক্ষতি হয়েছে ৯ হাজার কোটি ডলার, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রলয়ঙ্করী হারিকেন। একই বছরে আঘাত হানা ইরমার কারণে ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হারিকেনের তালিকায় ইরমার স্থান পঞ্চম। ৩৮ বছর ধরে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় ছাড়িয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের এ তালিকা করে আসছে এনওএএ।

এছাড়া অতিরিক্ত উষ্ণতার কারণে ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের ফলে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এনওএএ জানায়, ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে অতীতের যেকোনো দাবানল থেকে তিন গুণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার এ সাম্প্রতিক দাবানলটিতে।
টেক্সাস রাজ্যের অস্টিনে আমেরিকান মেটেরোলজিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সভায় এ তথ্যগুলো উপস্থাপন করে এনওএএ।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের প্রতিনিধি শন মার্টিন বলে, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক খরা, দাবানল, শস্যহানি ও নিয়মিত উপকূলীয় ঝড় আঘাত হানছে; যা অনেক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে আনছে।
গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ডেনমার্কের জিডিপির সমান। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে ২০১৬ সালে দেশটির জিডিপি ছিল ৩০ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার।

এনওএএর জলবায়ুবিদ অ্যাডাম স্মিথ বলেছে, পানিবায়ু পরিবর্তনের ফলে শতকোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনা দুর্যোগের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হচ্ছে, খরা-দাবানল বৃদ্ধি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যা।