হরকতুল জিহাদ-এর এপিঠ ওপিঠ

ডেস্ক: আফগান রণাঙ্গনেই হরকাতুল জিহাদের জন্ম। যুদ্ধ চলাকালেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় দেশে ফিরে হরকাতুল জিহাদ গঠন করবে। ১৯৯৪ সালের দিকে রাজধানীর ফকিরেরপুল এলাকায় একটি অফিসের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৮ সালে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের পর তিন ভাগ হয়ে যায় এটি।

মুফতে হান্নান, মুফতে আবদুর রৌফ ও মালানা শেখ ফরিদ আলাদা হয়ে তিনটি গ্রুপ তৈরি করে। প্রথম থেকেই মুফতে হান্নানের গ্রুপটি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলো। ২০০০ সালের জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে মুফতে হান্নান আলোচনায় আসে। সে সময়ই হরকাতুল জিহাদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে বানিয়ারচরে ও ময়মনসিংহে বোমা হামলার ঘটনায় মুফতে হান্নানের সংগঠনকেই দায়ী করা হয়েছিলো। এছাড়া এরপর আরো কিছু বোমা হামলার ঘটনায় এ সংগঠনকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকেই মুফতে হান্নানকে প্রকাশ্যে আর দেখা যায়নি। ভেতরে ভেতরে সে কাজ চালিয়ে গেছে। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় মুফতে হান্নান।

মুফতে আবদুর রৌফের নেতৃত্বে হরকাতুল জিহাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ গঠিত হয়। ২০০৬ সালের ২ আগস্ট ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে মুফতে রৌফ ও তার ২৬ সহযোগীকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। তারা গ্রেফতার হওয়ার ফলে এ গ্রুপের সাংগঠনিক তৎপরতা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। এছাড়া শেখ ফরিদের নেতৃত্বে হরকাতুল জিহাদের একটি অংশ এখন বেশ সক্রিয়। এনজিও’র আড়ালে সে কার্যক্রম চালাচ্ছে। মুফতে হান্নান ও মুফতে রৌফ গ্রেফতার হওয়ার পর হরকাতুল জিহাদের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন এ গ্রুপটির হাতে।

এ সংগঠনে এখন নেতৃত্ব ছিলো ধর্মব্যবসায়ী মালানা আবদুস সালাম ও মালানা শেখ ফরিদ। তবে ধর্মব্যবসায়ী মালানা আবদুস সালাম আটক হয়েছে। এর বাইরেও তাদের সঙ্গে রয়েছে মুফতে শফিকুর রহমান, মালানা আবদুর রাজ্জাক, মালানা আবু তাহের, মালানা রহমতউল্লাহ, মালানা সাব্বির আহমেদ। এরা সবাই দেওবন্দীপন্থী ওহাবী-খারিজী কওমী মাদরাসার নেতা।

ঙালিদের অধিকার আদায়ের নামে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো হয়েছিল তা ছিল পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্যে দুশমনদের একটি সুসংগঠিত চক্রান্ত। সে ওই সভায় বলেছিল, ‘দুশমনদের চক্রান্ত থেকে মহান সেনাবাহিনী দেশকে রক্ষা করছে। আমাদেরকেই এই অবস্থা ধরে রাখতে হবে।’

স্বাধীনতাবিরোধী এদেশীয় ঘাতক চক্রের অন্যতম সদস্য, বিএনপি নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ১২ জুলাই যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। সে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের জানায়, ‘দেশের অবস্থা বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। দেশের এখানে সেখানে সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, দুষ্কৃতকারীরা এধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল এবং এখনো তারা কোথাও কোথাও সক্রিয় রয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেশ স্বাভাবিক রয়েছে। এ পরিস্থিতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।’

তথাকথিত শান্তিকমিটির সংগঠকদের প্রথম ১২ জনের মধ্যে অন্যতম একজন পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিক পার্টির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল মালানা নুরুজ্জামান। ১২ জুলাই সে পূর্ব-পাকিস্তানের অবস্থা সরেজমিনে দেখে সিদ্ধান্ত নেবার পরামর্শ দেয় পশ্চিম-পাকিস্তানি নেতাদের। সে জানায়, দুই অঞ্চলের রাজনৈতিক যোগাযোগের সঙ্কটের জন্যেই পাকিস্তানের দুশমনরা জনগণের মধ্যে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে।

এদিন সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর মহকুমার শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম খান প্রাক্তন এমপিএ এবং জেলা শান্তিকমিটির সদস্য সাজ্জাদুল হক প্রমুখ মিলিত হয় দেবিদ্বারের জাফরগঞ্জে।

সিলেটে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত ছিলো সিলেট জেলা পাকিস্তান দরদী সংঘের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সাইফুল আলম খান। ১২ জুলাই সে সিলেটের অবস্থা সম্পর্কে জানায়, ‘সিলেটে ৭ হাজার বাস্তুত্যাগী দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছে। সিলেটের জনসাধারণ দুষ্কৃতকারী দমনে সেনাবাহিনীকে সর্বান্তকরণে সহায়তা করছে।,

এই দিন ঢাকা শহর মুসলিম লীগ নেতা মুরাবিয়া হোসেন পাকিস্তান সফর করে এসে বলে যে, ‘পাকিস্তানের সংহতি ও অখ-তা রক্ষা করতে হলে দ্বিধাবিভক্ত মুসলিম লীগ একত্রীকরণ করা প্রয়োজন।’

(তথ্যসূত্র: দৈনিক পাকিস্তান, সংগ্রাম ১২, ১৩, ১৪ জুলাই ১৯৭১ ঈসায়ী।)