অর্থ পাচার বন্ধে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব সিপিডি’র

ঢাকা: দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করার প্রস্তাব করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

শনিবার অর্থ-পাচার নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

এসময় আলোচকরা আরো বলেছেন, অর্থ-পাচার রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।

সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ড. আকবর আলি খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ প্রমুখ।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে বিদেশে অর্থ পাচার বেড়েছে। ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। অর্থ-পাচারের দিক থেকে শীর্ষ ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০। গত ১০ বছরের হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ৫৫৮ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যার ৮৮ শতাংশই হয়েছে আমদানি ও রপ্তানিতে মিথ্যা মূল্য ঘোষণা দিয়ে।

সিপিডি আরও বলছে, ২০১৩ সালে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা শিক্ষা বাজেটের ৩ দশমিক ৬ গুণ; স্বাস্থ্য বাজেটের ৮ দশমিক ২ গুণ। আর পাচার করা অর্থের যদি ২৫ শতাংশের ওপর করারোপ করা যেত, তাহলে স্বাস্থ্য বাজেট তিন গুণ আর শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ হতো। ওই বছর (২০১৩) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাড়ে ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে অনেকে টাকা রাখতে ভয় পান। তাই বিদেশে টাকা পাচার করেন। শুধু করের হার কমালেই টাকা পাচার বন্ধ হবে না। টাকা পাচার বন্ধে একটি স্থায়ী আইনি কাঠামো তৈরির সুপারিশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বিনিয়োগের সুযোগের অপ্রতুলতার কারণেই মূলত টাকা পাচার হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ থাকলে এত টাকা পাচার হতো না। তাঁর মতে, রাজনৈতিক অস্বস্তির কারণেও টাকা পাচার হয়। নির্বাচনের বছর ২০০৮ সালে যে টাকা পাচার হয়েছে, তা আগের বছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। আর ২০১৩ সালে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। নির্বাচন এলেই টাকা পাচার হয়। এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিনিয়োগ নিঃস্ব একটি দেশ এখন ক্রমান্বয়ে পুঁজি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হচ্ছে। এর মতো বৈপরীত্য আর কিছু দেখি না। যে দেশে বিনিয়োগের জন্য পুঁজি আসছে না, সেই দেশ থেকে পুঁজি পাচার হয়ে যাচ্ছে।