রোজায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, ঈদে ১০দিনের ছুটিসহ ৮ দফা দাবিতে ওলামা লীগের মানববন্ধন

ঢাকা: পবিত্র রমজানে সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ রাখার, পবিত্র ঈদুল ফিতরে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ৩ দিনের স্থলে ১০দিন সরকারি ছুটির দাবিসহ ৮ দফা দাবিতের মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ওলামা লীগের নেতৃবৃন্দ। আজ শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার বর্তমানের তরুন প্রজন্মের নৈতিকতার অবক্ষয়, সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, তরুন প্রজন্মের নৈতিকতা অবক্ষয় ও অসামাজিক কার্যকলাপের কোন দৃষ্টান্ত যখন খবরের কাগজে ওড়ে বেড়ায় তখন অনেকে বলেন সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে হেবে। এই ধর্মীয় শিক্ষা, চারিত্রিক গঠনের সর্বোত্তম সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এই মাস তাক্বওয়া (খোদা ভীড়ু) অর্জন করার মাস, নিজেকে নিষ্পাপ হিসেবে গড়ে তোলার মাস। এই এক মাস সিয়াম সাধনা করে, ইবাদত বন্দেগী করে নিজেকে নিষ্পাপ হিসেবে গড়ে তুলবে মুসলমান। সরকারের উচিত ৯৮ ভাগ মুসলমানকে সেই সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া। কিন্তু এই মাসে যদি শিক্ষার্থীরা বাকি এগার মাসের মতোই পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাক,  পরীক্ষার চাপে রোজা রাখতে না পারে তাহলে  একেতো তাদের ফরয রোজা রাখতে অসহোগীতা করা হলো, দ্বিতীয়ত তাদের চরিত্র গঠনের সুযোগ থেকে ফিরিয়ে রাখা হলো, তৃতীয়ত ঘরের বাহিরে গিয়ে গুণাহ খতা করানোর সুযোগ সৃষ্টি ও ইবাদত বন্দেগী থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো। তাই সরকারকে পবিত্র রমজানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পরীক্ষাসহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিতে হবে।

ভারতীয় আমের বাজার সৃষ্টির জন্য দেশের আম চাষীদের পরিকল্পিতভাবে ক্ষতির সম্মুখিন করা হচ্ছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, বিগত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে ২২ দিন আমপাড়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। আর এবার ২৪ মে’র আগে বাগান থেকে আম পাড়া নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। কারণ এরমধ্যে আম বাজারে তুলতে না পারলে আম চাষীরা পথে বসবে। তাদের গাছের আম গাছেই পেকে নষ্ট হয়ে যাবে। আর এদিকে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে নিষিদ্ধ ভারতীয় বিষাক্ত আম বাংলাদেশের বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে।

মানববন্ধনে ওলামা লীগের উপস্থাপিত দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে-

১. মোসাদের সাথে জড়িত উগ্র সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী ও গয়েশ্বর মার্কা হিন্দু এবং জামাত-জোট এজেন্ট- যারা এদেশে আইএস সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে চায়, বিশেষ করে বর্তমানে ‘সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা হিন্দু নির্যাতন করছে’ বলে এবং ‘বর্তমান সরকারের আমলে বেশি হিন্দু নিপীড়ণ হচ্ছে’ অপপ্রচার চালায় তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।

২. পবিত্র রমজানে অসহনীয় যানজট নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের ভর্তুকি দিতে হবে। রাজধানী ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। দেশের বিভাগগুলো প্রদেশ করতে হবে। রমজান শরীফে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। এবং সমস্ত পরীক্ষা গ্রহণও বন্ধ রাখতে হবে।

৩. পবিত্র রমজানে সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদে মসজিদে ইফতারী দিতে হবে। ইফতারের সময় যানজটে আটকে পড়াদের ইফতারী দিতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারীভাবে বিত্তশালী ব্যক্তি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার জন্য সরকারকেই উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে হবে।

৪. ঈদের ছুটি ১০ দিন করতে হবে। ঈদকে পূজি করে বিশ হাজার কোটি টাকার ভারতীয় পোশাক বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। পবিত্র রমজানের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার্থে ভারতীয় টিভি চ্যানেল, সিনেমা-নাটক, পর্নোগ্রাফী, অশ্লীলতা, খেলাধুলা ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে।

৫. যাকাতের নামে লোক দেখানো ঘোষণা ও ভীড়, নিম্নমানের কাপড় বা আলাদা কাপড় নিষিদ্ধ করতে হবে। ইনকাম ট্যাক্সের পরিবর্তে যাকাতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক করে বর্তমান উন্নয়ন বাজেটের চেয়েও বেশী, প্রায় দেড় লক্ষাধিক কোটি টাকা আয়ের সুফল দেশবাসীকে দিতে হবে।

৬. বাজেটে শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সর্বত্র আনুপাতিক হারের চেয়ে অনেক বেশি হিন্দু নিয়োগ ও ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। এতে করে ৯৮ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে মুসলমানদেরকে ধর্মীয় বৈষম্যের স্বীকার করা হচ্ছে। যা পুঁজি করে ক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণদের উত্তেজিত করে জামাত-জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিশেষ ইস্যূ তৈরী করবে। এটা অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

৭. নাস্তিক্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যপুস্তক তথা কুফরী শিক্ষা আইন- ২০১৬ ও শিক্ষানীতি- ২০১০ পাশ করে জামাত-জোট তথা ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে সরকার বিরোধী ইস্যূ তুলে দেয়া যাবেনা। ধর্মপ্রাণদের উত্তেজিত করার বাম ষড়যন্ত্র সফল করা যাবেনা। গণতন্ত্রের মন্ত্রী হয়ে সমাজতন্ত্রের পথ তৈরী করা যাবেনা।

৮. মদীনা শরীফের ইসলাম বিরোধী পিস টিভি বন্ধ করতে হবে। পিস টিভির আক্বীদাপন্থীরা ‘আইএস’-এর মতাদর্শী এবং সন্ত্রাসবাদের ভাবাদর্শী। এরা ওলীআল্লাহ, মীলাদ শরীফ, মাজার শরীফে বিশ্বাসী নয়। পিস টিভিসহ আইএস’এর সহমর্মী ওহাবী-সালাফী সব টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে হবে। কারণ ওরা তাওহীদের নামে প্রকারন্তরে সন্ত্রাসবাদ ছড়ায়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী ওলামা লীগের মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সাধারণ সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সভাপতি- সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি, আব্দুর রহমানসহ আরো অনেক নেতৃবৃন্দ।