সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি: ভারতে পালানোর চেষ্টায় নিও জেএমবি’র ৭ সদস্য

ঢাকা: ভারতে পালানোর চেষ্টা করছে নতুন ধারা তথা নিও জেএমবি’র ৭ সদস্য। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে তারা ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চতুর্মুখী অভিযান আর অব্যাহত নজরদারির কারণে এসব সন্ত্রাসবাদী সীমান্ত পাড়ি দিতে পারছে না। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের একটি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা সম্ভাব্য সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গোয়েন্দারা এমন জাল তৈরি করেছে, সেই জাল ভেদ করে এসব সন্ত্রাসবাদীর ওপারে (ভারতে) যাওয়া খুবই কঠিন।

তিনি জানান, দু-একজন ভারতে পলাতক জেএমবি’র এক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমাদের হাতে এখন সেই তথ্য আছে। সীমান্তে যে গোয়েন্দা রাডার স্থাপন করা হয়েছে তাতে নিও জেএমবি’র ধূর্ত সন্ত্রাসবাদীদের দেশত্যাগ করা সম্ভব হবে না। এদের পালানোর চেষ্টায় যারা সহায়তা করছে তাদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

সিটি ইউনিট সূত্রে জানা যায়, কল্যাণপুরে সফল সন্ত্রাসবাদীবিরোধী অভিযানে আটক সন্ত্রাসবাদী রাকিবুল হাসান রিগ্যানের কাছ থেকে কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তার তথ্য অনুযায়ী, অন্ততঃ ১৫ সন্ত্রাসবাদীকে আইনের আওতায় আনতে লক্ষ্য স্থির করেছে সিটি ইউনিটের একদল দক্ষ গোয়েন্দা। এ তালিকারই ৭ সন্ত্রাসবাদী সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোতে আসা-যাওয়া করছে। যাদের ধরার ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা নেয়া হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, অব্যাহত অভিযানের মুখে পালানোর চেষ্টাকারী নিও জেএমবি’র সদস্যরা এখন দিশেহারা। দু-একজন তাদের স্বজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। ওইসব সন্ত্রাসবাদীর স্বজনরাও গোয়েন্দা জালে আছে। প্রয়োজনীয় তথ্য উদ্ধারের জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রিগ্যানের তথ্য অনুযায়ী নাম আসে নিও জেএমবি’র এক বড় ভাই রবিনের। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ আস্তানায় যাতায়াত ছিল এই রবিনের। তার সঙ্গে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজানেরও ছিল যোগাযোগ। রবিন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হামলার সঙ্গে জড়িত। কল্যাণপুরে সন্ত্রাসবাদী আস্তানায় সে আসতো। এছাড়া শোলাকিয়ার হামলার পর নিহত সন্ত্রাসবাদী শফিউলের সঙ্গে উঠাবসা ছিল রবিনের। এরা একসঙ্গে কথিত হিজরতের নামে ঘর ত্যাগ করে।
শোলাকিয়া হামলার পর সন্ত্রাসবাদী শফিউলও রবিনের নাম বলে দেয়। রবিনের বাড়ি বগুড়ায়। তবে সন্ত্রাসবাদী দীক্ষা গ্রহণ এবং নাশকতার কাজে সে বেশিরভাগ সময় দিনাজপুর থাকত। দিনাজপুরের হিলি ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবি সীমান্ত দিয়ে রবিন কয়েক দফা পালানোর চেষ্টা করে।

সন্ত্রাসবাদী রিগ্যান ও রবিনের গুরু বলে পরিচিত সাকিব মাস্টারের বাড়ি বগুড়ার সেলিমপুরে। নিও জেএমবি’র এই কমান্ডার সন্ত্রাসবাদী রিক্রুটের পাশাপাশি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর তার নাম আসে। গুলশান হামলাকারীদের সাকিব প্রশিক্ষণ দেয়। এই সন্ত্রাসবাদী কমান্ডার দিনাজপুরের বিরামপুর এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করে। সেও দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদী রিগ্যানের তথ্য অনুযায়ী নাম আসা নিও জেএমবি’র সদস্য অভি রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দিয়ে পালিয়ে যেতে দু’দফা চেষ্টা করে। তার মতোই দিনাজপুরের মাসুদও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত ব্যবহার করতে যোগাযোগ করে এক পরিচিত জনের সঙ্গে। আরও আগেই পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী খালিদ ও রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব, শিহাব ও আজাদুল কবিরাজ। এই ৭ সন্ত্রাসবাদীর ভারত পালানো ঠেকাতে একাধিক গোয়েন্দা টিম কাজ করছে।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকারী সন্ত্রাসবাদী জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব উত্তরাঞ্চলের অন্যতম কমান্ডার। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। বিভিন্ন স্থানে হামলার আগে এই রাজীবই সন্ত্রাসবাদীদের কাছে হ্যান্ডমেড ইম্প্রভাইস গ্রেনেড ও অস্ত্র সরবরাহ করে। শোলাকিয়া হামলায় নিহত সন্ত্রাসবাদী শফিউলের গুরু ছিল রাজীব। হামলার আগে সে সন্ত্রাসবাদীদের কাটআউট পদ্ধতিতে প্রস্তুত করার কাজ করে। রংপুরে বিদেশী নাগরিক, কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত মুরতাদ, পঞ্চগড়ে ভিন্ন ধর্মের লোকসহ ওই অঞ্চলের হামলাগুলোর ক্ষেত্রে যে ধরনের অস্ত্র, গ্রেনেড প্রয়োজন ছিল তা রাজীবই সরবরাহ করে।

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসবাদী রিগ্যানসহ আরো দুই সন্ত্রাসবাদীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকারী সন্ত্রাসবাদীদের দু-একজন ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ভিড়েছে। কেউ কেউ এখনও সীমান্ত এলাকাতেই আছে। কিন্তু তারা সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে ভারতে যেতে চাইলেই ধরা পড়বে। সন্ত্রাসবাদীদের বর্ণনা দিয়ে সম্ভাব্য সীমান্ত পয়েন্টের সংশ্লিষ্টদের আগেই সতর্ক করা হয়েছে।