বিতর্কিত সনু নিগমের বাড়ির কাছে কোন আজানের শব্দই আসেনা, মামলা দায়ের

ডেস্ক: মসজিদের মাইকে আজানের শব্দে ঘুম ভাঙার আপত্তি তোলা ভারতীয় গায়ক সনু নিগমের বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার ভেতরে মসজিদে আজান দেয়ার জন্য কোনো মাইকই নেই! পবিত্র ফজর উনার আজান উনার শব্দ শোনা যায় কীনা তা পরখ করার জন্য সাংবাদিকরা গত বুধবার খুব ভোরে ওই গায়কের বাড়ির সামনে উপস্থিত হলে বিষয়টি তারা জানতে পারে।

বিবিসির সাংবাদিক ভোর ৫টা নাগাদ সনুর বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। তার আগেই সেখানে অন্য সাংবাদিকরা অপেক্ষায় ছিলো। ওই সময় সেখানে অন্ধকার ছিল। সাধারণভাবে ব্যস্ত থাকা মুম্বাইয়ের সড়ক সেসময় শুনশান হয়ে ছিল।
সাংবাদিকরা দেখতে পায়- সনু নিগমের বাড়ির আলো সেসময় সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তার বাড়ির বাইরে পুলিশ গাড়ি মোতায়েন ছিল। দু’জন পুলিশকর্মী গাড়ির বাইরে টহল দিচ্ছিলো।
সব সাংবাদিক শান্তিপূর্ণভাবে অপেক্ষায় ছিলেন, কোথা থেকে কোনো আজানের শব্দ ভেসে আসে কী না তা জানার জন্য। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে কেউই কোনো আজানের শব্দ শুনতে পায়নি!

ধীর ধীরে সমস্ত সাংবাদিক সেখান থেকে চলে গেলেও বিবিসির সাংবাদিক সেখানে আরো কমপক্ষে আধ ঘণ্টা ধরে আজান শোনার আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু সে কেবল সেখান থেকে যাতায়াত করা কিছু যানবাহনের শব্দই শুনতে পেয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই এলাকায় তিনটি মসজিদ আছে কিন্তু সবগুলোই মসজিদ সনু নিগমের বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দূরে। তার বাসা থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরে মাদ্রাসা তালিমুল কুরআন ট্রাস্ট মসজিদ আছে ওই মসজিদের আজান ভোর ৫ টা ২০ মিনিটে হয়।

মসজিদের ট্রাস্টি মেহবুব খান বিবিসি সাংবাদিককে বলেন, ‘সনু নিগম ২/৪ বছর আগে এখানে বাস করতে এসেছে। কিন্তু আমরা এখানে ৩০/৩৫ বছর ধরে আছি। এর আগে কেউ আজান নিয়ে সমস্যায় পড়েনি। সনু নিগম যেখানে থাকে সেখানে তো আমাদের আজানের শব্দ পৌঁছায়ই না।’

সনু নিগমের মন্তব্যে মর্মাহত মেহবুব খান বলেন, ‘লোকেরা আমাদের বলে আজান উনার আমরা উপকৃত হই। মানুষজন সময়মত উঠে কাজকর্মে যেতে পারে। কিন্তু সনু নিগম স্রেফ প্রচার পাওয়ার জন্য পরিবেশ খারাপ করছে।’
‘কত লোককে কষ্ট দিয়েছে, সনু তা ভুলে গেছেন’

সনু নিগমের বাড়ির ডানদিকে মাদ্রাসাতুল সালাহাই ট্রাস্টে কাজ করা হাবিব বলেন, তাদের মসজিদে লাউডস্পিকারই ব্যবহার করা হয় না।

মাদ্রাসা এ নাব্বেয়াহর ট্রাস্টি গুলাম জি বলেন, ‘সনু নিগম প্রথমে কেবল এক হাজার টাকার জন্য জাগরণে রাতভর গান করতো। সে ভুলে গেছে যে কত লোককে সে কষ্ট দিয়েছে। কেবল প্রচার পাওয়ার জন্যই সে এসব করছে।’

সনু নিগমের বাড়ির কাছে ‘ত্রিশূল’ নামক ভবনে বাসকারী লতা সচদেব বলে, গোটা দিনে আজানই শুনতে পাওয়া যায় না।
অন্য ভবনের মহিলা বাসিন্দা কিরণ ভাসান বলে, আজ পর্যন্ত সে সকালের (পবিত্র ফজর) আজান শুনতে পাননি।

গায়ক মীকা সিং বলেছে, ‘আমার মনে হয়, লাউডস্পিকার পরিবর্তনের বদলে আপনার নিজের বাসা বদল করে অন্য কোনো জায়গায় চলে যাওয়া উচিত।

প্রিন্স মাহমুদের ধারণাই সঠিক হলো: ‘আলোচনায় আসার জন্য সনু হতাশা থেকে এটি করেছে’

সনুর বিদ্রুপকারী মন্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সুরকার ও সঙ্গীতায়োজক প্রিন্স মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘বাচ্চারা তোমরা ইতিহাস জানো না। ১৪ বছর আগেই সনু নিলামের (নিগমের) ক্যারিয়ার সিলগালা করে দিয়েছিল মুসলমান রাহাত ফতেহ আলী খান, আতিফ আসলাম, তারপর আমাদের জেমস। সে বুঝে গিয়েছিল তার একঘেয়ে ছিঁচকাঁদুনে গলা আর কেউ শুনবে না। বুড়ো বয়সে পড়তি ক্যারিয়ারের ফ্রাস্ট্রেসনে, ভরপুর নেশাগ্রস্থ অবস্থায় শেষ রাতে ইচ্ছেমত লিখতে বসে যাওয়া ছাড়া তার আর কিবা করার আছে?’

 

তিনি আরো লেখেন, ‘আজানের সুরকে অবমাননা করে টুইট, আলোচনায় আসার উপলক্ষ মাত্র। আর মাঝে মধ্যে উপলক্ষ বদলালেও তার ভেতরের সাম্প্রদায়িকতার তোরণ সরে না। এরা কি আসলেই শিল্পী নাকি স্ট্যান্টম্যান! সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এরাই ছড়ায়।’

প্রিন্স লেখেন, ‘আমাদের বাড়ি শহরের সবচেয়ে বড় গির্জার পাশে। শুধু আজানের সুর নয় সন্ধ্যে-সকাল চার্চবেল আর আশেপাশের হিন্দু বাড়ি থেকে আসা উলুধ্বনি আমাদের কাছে শ্রেষ্ঠ সুর বলেই মনে হয়।’

এদিকে, আজান সংক্রান্ত ইস্যুতে ভারতের পানিপথের একটি আদালত সনু নিগমের বিরুদ্ধে ভারতীয় দ-বিধির ২৯৪, ২৯৫, ২৯৫ এ, ২৯৬, ৫০০ এবং ৫০১ ধরায় মামলার নির্দেশ দিয়েছে।

আইনজীবী মোমিন মালিক পানিপথের সিজেএম আদালতে গত ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আবেদন জানালে ওই নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী ২ মে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।