সিনহার মেয়াদে রিভিউ চায় না সরকার

ডেস্ক : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মেয়াদকালে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ করতে চায় না সরকারপক্ষ। পরবর্তী প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নিলে রিভিউ আবেদন করা হবে। এ ছাড়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের যেসব পর্যবেক্ষণে সরকারের আপত্তি রয়েছে তা নিজ থেকেই যেন প্রধান বিচারপতি এক্সপাঞ্জ করেন, সে বিষয়ে দাবি জানানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের দুয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এমনটিই আলোচনা হয়েছে প্রধান বিচারপতির।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রবিবার থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে উচ্চ আদালত। এই ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার। এর পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হবে শীতকালীন ছুটি। প্রধান বিচারপতির অবসরে যাওয়ার কথা আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগের এক আইনজীবী নেতার মতে, ছুটিসহ মোট ৭৫ কর্মদিবস মেয়াদ আছে এসকে সিনহার।

সংসদ সদস্যদের হাতে বিচারপতির অভিশংসনের ক্ষমতাসংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পর থেকেই সরকারের নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্ব দৃশ্যমান হতে শুরু করে। এই দূরত্ব তীব্র আকার নেয় ১ আগস্ট রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর। বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিরোধও প্রকাশ্য রূপ নেয়।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের ওই সূত্র জানিয়েছে, ২২ আগস্ট প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর বৈঠকে সংকট সমাধানের ইঙ্গিত মিলেছে।

গওহর রিজভীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এসকে সিনহার সঙ্গে চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন গওহর রিজভী। উচ্চ আদালতে রাখা বক্তব্যে উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তান প্রসঙ্গ আনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসকে সিনহার ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন বলে প্রধান বিচারপতিকে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রায়ের বিষয়ে রিভিউ আপাতত করা হবে না। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতিকে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো এক্সপাঞ্জের বিষয়ে জানানো হয়। গওহর রিজভী বলেন, সবচেয়ে ভালো হয়, প্রধান বিচারপতি নিজ থেকে রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এক্সপাঞ্জ করে দিলে। কারণ সরকার সময় নিয়ে রায়ের রিভিউ করতে চায়। রায়ের টুকরো টুকরো পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জের জন্য রিভিউ করতে চায় না। এসকে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর নতুন প্রধান বিচাপতির সময়ে এ বিষয়ে রিভিউ করা হবে।
সরকারের একাংশের ধারণা, প্রধান বিচারপতিকে এ সময় বাধ্যতামূলক ছুটিতে বা অবসরে পাঠানো হলে সেটি সরকারের জন্য আরও বিব্রতকর হবে। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল চাইলে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের রিভিউ ছাড়াই রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লিখিত অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো এক্সপাঞ্জের আবেদন করতে পারেন। কারণ এ রায়ে রাষ্ট্রের প্রধান তিন বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নজির না থাকলে নজির সৃষ্টি করতে হয়। -আমাদের সময়