ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি থাকলে নামায হবে কি?

আল্লামা আবু খুবাইব: যে ঘরে বা স্থানে কোনো মানুষের ছবি অথবা কোনো প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে নামায পড়া যাবে না, পড়লে নামায ছহীহ ও কবুল হবে না। তাই ছবিওয়ালা ঘরে অর্থাৎ যে ঘরে ছবি রয়েছে সেখানে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি রয়েছে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী অর্থাৎ মুছল্লীর সামনে পিছনে, উপরে, নীচে, ডানে-বামে, যেখানেই প্রাণীর ছবি, মূর্তি থাকুক না কেন তাতে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। উক্ত নামায দোহরায়ে  পড়া (পুনরায় পড়া) ওয়াজিব হবে|
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن على رضى الله تعالى عنه قال صنعت طعاما فدعوت النبى صلى الله عليه و سلم فجاء فدخل فراى سترا فيه تصاوير فخرج وقال ان الملكئة لا تدخلو بيتا فيه تصاوير .
অর্থঃ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, আমি খাদ্য তৈরী করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দাওয়াত দিলাম| হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে, ঘরে প্রবেশ করে প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি পর্দা দেখে, ঘর হতে বের হয়ে গেলেন| এবং বললেন, “নিশ্চয়ই ফেরেশতারা ঐ ঘরে প্রবেশ করেননা, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে|”
[দলীল- নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৩০০ ]
عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان قر ام لعائشة سترت به جانب بيتها , فقال النبى صلى الله عليه وسلم اميطى عنى لا تزال تصاوير. تعرض لى فى صلاتى.
অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার একখানা (প্রাণীর ছবিযুক্ত) পর্দা ছিল, যা তিনি উনার ঘরের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন| হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দিকা আলাইহাস সালাম পর্দাটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিন| কারণ এর ছবিগুলো নামাযে আমার দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট করে।” [দলীল- ফাতহুল বারী ১০, জিঃ পৃঃ ৩৯১, উমদাতুল কারী ২২তম জিঃ পৃঃ ৭৪, মুজামুল মুফহারিস ৩য় জিঃ পৃঃ ৪৪০, বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১]
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال لا يصلى فى بيت فيه تماثيل.
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “ঐ ঘরে নামায পড়োনা যে ঘরে প্রাণীর মূর্তি বা ছবি থাকে|” [ দলীল : মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ ৪৬ ]
عن عيسى بن حميد رحمة الله عليه قال عقبة الحسن فال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير انحروها.
অর্থঃ হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, হযরত ওকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে| তখন হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল|
[দলীল: মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ ৪৬ ]
عن ابى عشمان رحمة الله عليه قال حدثنى لبابة عن امها وكانت تخدم عثمان بن عفان ان عثمان بن عفان كان يصلى الى تابوت فيه تماثيل فامر به فحك.
অর্থঃ হযরত আবু উসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত| তিনি বলেন, লুবাবাহ উনার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, উনার মাতা হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খেদমতে ছিলেন, আর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামায পড়ছিলেন| অতঃপর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদেশে ওটা নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হলো।
[ দলীল: মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ ৪৬ ]
ويكره لبس ثوب فيه تمثال روح. وان يكون فوق رأسه او بين يديه او بحذائه ان يمنة او يسرة او محل سجود.
অর্থঃ প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী এবং নামাযীর মাথার উপর সামনে ডানে, বায়ে এবং জুতোর মধ্যে এবং সিজদার স্থানে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে|
[ দলীল” রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ ৬৪৮ পৃঃ, ইমদাদুল ফতওয়া জাদীদ ১ম জিঃ ৪৪০ পৃঃ, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ ৩৮৬ পৃঃ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিঃ ১১৯ পৃঃ, তুহফাতুল আজম ৩৬ পৃঃ, নুরুদদেরায়া ২য় জিঃ ৬০ পৃঃ, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ ৫৮ পৃঃ, মা’দানুল হাক্বায়িক্ব ১ম জিঃ ১৫২ পৃষ্ঠা]
ويكره ان يكون فوق رأسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير او صورة معلقة. واشدها كراهة ان تكون امام المصلى ثم من فوق راسه. ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.
অর্থঃ নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে যদি নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা জুতোর মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণীর ছবি থাকে এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহরিমী হবে প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বায়ে বা পেছনে থাকলে|
[ দলীল: ফতহুল কাদীর ১ম জিঃ ৩৬২ পৃঃ, আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ ৮০৭ পৃঃ, বাহরুর রায়িক ২য় জিঃ ২৭ পৃঃ, মাবছূত ১ম জিঃ ২১১ পৃঃ,  হেদায়া ১ম জিঃ ১৪২ পৃঃ,  শরহে বেকায়া, বেকায়া ১ম জিঃ ১২৮ পৃঃ,  শরহে নেকায়া ১ম জিঃ ২১৭ পৃঃ,  কিতাবুল ফেকাহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া ১ম জিঃ ২৭৮ পৃঃ,  মারাকিউল ফালাহ ২৪০ পৃঃ, জামিউছ ছগীর ২৬ পৃঃ, মালাবুদ্দা মিনহু ৬১ পৃঃ আনোয়ারে মাহমূদাহ ৫৬ পৃষ্ঠা]
جس کپڑے پر جاندار کی تصویر ہو اسے پہن ک ر نماز پرنا مکروه تحریمی ہے. نماز کے علاوه بهی ایسا کپڑا پہننا ناجائز ہے. اور تصویر مصلی کی سر پر یعنی چہت میں ہو یا معلق ہو یا محل سجود میں ہو تو نماز مکروه تحریمی ہوگی. اور مصلی کے اگے یا داہنے یا بائیں تصویر کا ہونا اور پس پشت ہونا بہی مکروه ہے.
অর্থঃ প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী| নামাযের বাইরেও উক্ত কাপড় পরিধান করা নাজায়িয| এবং প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদের মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায়, অথবা সিজদার স্থানে থাকলে নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে এবং নামাযীর সামনে, ডানে, বায়ে এবং পেছনে প্রাণীর ছবি থাকলেও নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে|
[দলীল:  বাহারে শরীয়ত ৩য় জিঃ ১২৩ পৃঃ, ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই ২০৬ পৃঃ,
নূরুল হেদায়া ১ম জিঃ ১০৯ পৃঃ, সুন্নী বেহেস্তী জিওর ১ম জিঃ ৮৯ পৃঃ,  আহসানুল মাসায়িল ৪২ পৃঃ, রোকনুদ্দীন ৭০ পৃঃ, আইনুল হেদায়া ১ম জিঃ ৫১২ পৃষ্ঠা ইত্যাদি]
تصویر والے مقام م یں نماز پڑهنا م کروه تحر یی هے. اور اسکا اعاده واجب هے.
অর্থঃ প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী এবং উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব| “কেননা আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর কিতাবে মাকরুহ-এর বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মাকরূহ তাহরিমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তানযীহী হলে নামায দোহরানো মুস্তাহাব|
[দলীল:  আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ ৪২৭ পৃঃ, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি]