বাঘ গণনায় ব্যয় ২ কোটি টাকা

ঢাকা: সুন্দরবনে সম্প্রতি শেষ হওয়া ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে ২য় বারের মতো বাঘ গণনা কার্যক্রমে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বনবিভাগ। টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় বাঘের সংখ্যা ও তার জীবন যাপন জানতে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু হয়। এবার বন বিভাগ বাঘের সঠিক সংখ্যা পেতে দেশী-বিদেশী গবেষকদের পাশাপাশি সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। তবে আগামী আগস্টের আগে ফলাফল জানা যাবে না। সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী আজ মঙ্গলবার টেলিফোনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন ‘২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবনে দ্বিতীয় দফা বাঘ গণনা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় সুন্দরবনের দুটি অভয়ারণ্য অঞ্চলসহ প্রায় দুই হাজার বর্গফুট এলাকার ৩৪০টি পয়েন্টে গাছের সাথে স্থাপন করা হয় সাড়ে চারশ’ ক্যামেরা। আর টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় পাহাড়ী শুঁকির গুঁড়া। নয়টি দল এসব পয়েন্ট থেকে ১০৩ দিনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাদের তদারকি ও পরিচালনা করেছে বাঘ ওয়াইল্ড টিম ও বনবিভাগের বিশেষ দল।’

শেষ হওয়া বাঘ গণনাকে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় গবেষণা প্রকল্প আখ্যা দিয়ে মুহাম্মদ সাঈদ আলী আরো বলেন, ‘এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আগামীতে বাঘ রক্ষা গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ইউএসএআইডি’র দেয়া প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা। এবার সুন্দরবনের সঠিক বাঘের সংখ্যা পাওয়া যাবে। এরপর বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া যাবে। মূলত ২০২২ সালের মধ্যে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’ এর অংশ হিসেবে সুন্দরবনে আরো ১৮টি অভয়ারণ্য করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বনবিভাগের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতবার বাঘ শুমারি হয়েছে। যার মধ্যে ১৯৭১ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩২০, ১৯৭৫ সালে ৩৫০, ১৯৮০ সালে ৪৩০ থেকে ৪৫০, ১৯৯২ সালে ৩৫৯, ১৯৯৩ সালে ৩৬২, ২০০৪ সালে ৪৪০ এবং ২০১৫ সালে সবশেষ বাঘ শুমারিতে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় মাত্র ১০৬টি। সুন্দরবন বিভাগের কর্তকর্তারা জানান, সবশেষ শুমারিতে সন্তুষ্ট নন বিশেষজ্ঞরা। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। সে কারণে এবার সম্পূর্ণ ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে হয়েছে মনিটরিং।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মদিনুল আহসান জানান, প্রথম দফায় সুন্দরবনের ২৬ শতাংশ এলাকায় ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে বাঘ শুমারি করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের দক্ষিণ দিকে থেকে বনের ৫০ শতাংশ এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করে এবারের গণনা কার্যক্রম চালানো হয়। এর আগে যেসব এলাকায় বাঘের উপস্থিতি বেশি এমন এলাকাগুলো বেছে নেওয়া হয়েছিল। মদিনুল আহসান আরো জানান, ২০১৩ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনা শুরু হয়েছিল। বনের বিভিন্ন স্থানে গাছ বা খুঁটির সঙ্গে ৯০টি ক্যামেরা বসিয়ে ওই গণনার কাজ করেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০ জন কর্মী। ২০১৫ সালের মার্চে শেষ হয় গণনার কাজ।