আইএস আতঙ্কে শুরু হচ্ছে ইসকনের রথযাত্রা, চলছে প্রস্তুতি

চট্টগ্রাম: গুলশান হামলার পর সারাদেশে যখন ‘আইএস আতঙ্ক’ বিরাজ করছে ঠিক সময় শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশের উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।আগামীকাল ৬ জুলাই বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সংখ্যালঘুদের মধ্যে কৃষ্ণ ভক্তের সমাগমে পালিত হবে এ উৎসব।

রথযাত্রা উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)’র উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন মন্দির থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।এই দিনে নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, গুরু পুজা,যজ্ঞানুষ্ঠান, দর্শন আরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন ইসকন মহারাজবৃন্দ, রাষ্ট্রীয় ও দেশী বিদেশী অতিথি, ধর্মীয় আলোচকবৃন্দসহ শিশু-কিশোর, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ভক্তপ্রাণ লোকজন।

এই  উৎসবকে সামনে রেখে নগরজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। রথের চাকা লাগানো,রঙ করা, পাখি, রথের ছাতা বানানোসহ নানা রঙ্গে সাজিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের রথগুলোকে।প্রবর্তক মন্দিরের আয়োজকরা জানান, প্রায় সপ্তাহ আগে থেকে চলছে রথের এই সাজ-সজ্জার কাজ।

ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সুন্দর সেন জানান, বুধবার বেলা ৩টার দিকে বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রার উদ্বোধনের মাধ্যমে এই র‌্যালি প্রবর্তক মোড়-গোল পাহাড়-কাজীর দেউরী-জামালখান-চেরাগী-আন্দরকিল্লা-লালদিঘী হয়ে নিউ মার্কেট পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করবে।

১৪ জুলাই নন্দনকানন( ডিসি হিল )থেকে উল্টো রথযাত্রার মধ্যে দিয়ে এই যাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। এতে সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে পাঁচশত শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক মোতায়ন থাকবে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহযোগীতা করবেন বলে জানিয়েছেন এই উদ্দ্যোক্তা।

তিনি আরো জানান, জগন্নাথদেবের এই রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ইসকন মন্দিরে ওই দিন দুপুরে ৪০ হাজার ভক্তের জন্য মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  ৭জুলাই থেকে-১৩ জুলাই পর্যন্ত ভাগবত কথার আয়োজন করা হয়েছ। এতে পরিবেশনায় থাকছেন শ্রীপাদ তারকা কৃষ্ণনাম দাশ ব্রক্ষ্মচারী, আই এম মায়াপুরী ইনিস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, শ্রীধাম, ভারত।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)’র মতে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শীল প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে প্রথম রথযাত্রা শুরু করেন। যা বর্তমানে বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরে তারই অনুসারী শ্রী শ্রীমৎ জয় পতাকা স্বামী এবং শ্রী পাদ শ্রী হরিদাশ অধিকারী ২০০৪ সালে বাংলাদেশে জগন্নাথদেবের এই রথযাত্রার শুরু করেন।

১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিস্টান মিশনারীতে পড়াশোনা করা প্রভুপাদের হাতে এই সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ার উদ্দেশ্য হলো মূলধারার যারা হিন্দু তাদের মাঝে বিভেদ তৈরী করা বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাই প্রভুপাদ যখন ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন সনাতনী হিন্দুরা এর প্রতিবাদ করলে প্রভুপাদের পাশে তখন এসে দাঁড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স প্রমুখ ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ। এই হারভে কক্স ছিলেন একজন খ্রিস্টিয়ান গবেষক, যে কিনা সোশ্যাল খ্রিস্টিনারি নিয়ে গবেষণা করতেন। যার মূল ছিল দরিদ্র জনগণ। ধারনা করা হয় প্রভুপাদ এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে দরিদ্র শ্রেনীকে টার্গেট করে তার মিশন নিয়ে এগিয়ে যায়।