রোহিঙ্গা ইস্যুতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ, চাপে মিয়ানমার

ঢাকা: মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দক্ষ কূটনৈতিক পদক্ষেপের কারণে চাপে রয়েছে মিয়ানমার। গত অক্টোবরে রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হলে ‘নিঃশব্দ’ কূটনীতির মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার প্রয়াস চালায় বাংলাদেশ। এর ফলে সারাবিশ্বের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্রাসেলস সফরকালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রধান কূটনীতিক ফেডেরিকা মোঘেরিনির সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন অং সান সু চি। এর আগেও আসিয়ান দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন, যুক্তরাষ্ট্রসহ দ্বি-পাক্ষিকভাবে বিভিন্ন দেশের কাছে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে এ বিষয়ে তাদের কথা বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া এখন দ্বি-পাক্ষিকভাবে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতেও সরকার রোহিঙ্গা বিষয়টি উত্থাপন করে।’

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘১৯৮০-এর দশক থেকে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চেয়েছি কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ছিল না। আমরা এ জন্য শক্ত অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছি। সারাবিশ্বের কাছে তাদের আসল উদ্দেশ্য তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছি।’

এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে কিনাÍজানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সমস্যার সমাধান রাতারাতি হবে না। তবে বাংলাদেশের তীব্র প্রতিবাদে চাপে আছে মিয়ানমার।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অং সান সু চি, যাকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মানসকন্যা মনে করা হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্মও দিয়েছেন সু চি নিজেই। এ কারণে বিশ্বব্যাপী সু চির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা মিয়ানমারের জন্য কোনও ভালো ফল বয়ে আনবে না। এমনকি অন্য নোবেলজয়ীরাও তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।’

এ ধরনের পরিস্থিতি আরো কিছুদিন চললে মিয়ানমারের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কারণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি সেখানে ব্যবসা শুরু করে। অনেকে সেখানে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যেকোনও নেতিবাচক আলোচনা সেখানে ব্যবসায়িক পরিবেশ বিঘ্নিত করবে। সেখানে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

বাংলাদেশের অবস্থান:

গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিকভাবে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে মিয়ানমার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। নভেম্বরে এই সমস্যা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বাংলাদেশ বিদেশী কূটনীতিকদের জানান। এর পরপরই জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে চাইলে সঙ্গে-সঙ্গেই স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে বাংলাদেশ অভিবাসন বিষয়ে বৈশ্বিক সভার আয়োজন করে। এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রোহিঙ্গা বিষয়ে একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিকভাবে আলোচনা করে সরকার।

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ পদক্ষেপ নেয়ার পরে জানুয়ারিতে আলোচনায় বসতে রাজি হয় মিয়ানরমার। দেশটির বিশেষ দূতকে বাংলাদেশ কড়া বার্তা দেয় গোটা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য। এরপর ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কোফি আনান কমিশনের তিন সদস্য, মিয়ানমার সরকারের গঠিত রাখাইন কমিশনের সদস্য, জাতিসংঘের বিশেষ জ্যা পোর্টিয়ার ইয়াংহি লি, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূত, বাংলাদেশে অবস্থিত রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সরকার।’