কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের

দেশের চামড়াশিল্পে বছরে যে পরিমাণ চামড়ার প্রয়োজন হয়, তার প্রায় অর্ধেক সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে। তবে চলতি বছর সারাদেশ থেকে চামড়া সংগ্রহ ঠিক ভাবে হলেও তা সংরক্ষন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

মূলত সারা দেশে পশু কোরবানির পর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রাজধানীর পোস্তসহ বিভিন্ন আড়তে সংরক্ষণ করা হয়। ট্যানারি মালিকরা দু-এক দিন পর এসব চামড়া কিনে নিজস্ব ট্যানারিতে সংরক্ষণ করেন। এরপরে তারা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে।

এবার সবথেকে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে হাজারীবাগ থেকে সকল ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের কারণে। সেখানে কারখানার জন্য প্লট পেয়েছে ১৫৫টি ট্যানারি। কিন্তু এসব ট্যানারির মধ্যে শুধু ৬৭টি সেখানে উৎপাদনে যেতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ট্যানারিগুলো এখনো সম্পুর্নরূপে উৎপাদনে যেতে পারেনি। বিশেষ করে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের উপযোগী হয়ে উঠতে পারেনি এসব কারখানা। আবার কাঁচা চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের দাম বাড়তি থাকার কারণে চামড়া ঠিক ভাবে সংরক্ষণ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পোস্তার চামড়া আড়তদার জানান, কোরবানি উপলক্ষে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ঈদ আসার এক মাস আগেই লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই লবণের দাম না কমলে এর প্রভাব চামড়া খাতে এসে পরে। এতে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যয় বেড়ে যায়।

এছাড়া সরকারি আদেশে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে ট্যানারিগুলোর মালামাল পরিবহন ও সবকিছু গুছিয়ে উঠতে মালিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যদি ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক ঋণ নিতে না পারে, তবে আমাদের কাছ থেকে তারা নগদ টাকায় কাঁচা চামড়া কিনতে পারবে না। আর নগদ টাকায় চামড়া বিক্রি করতে না পারলে আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হব।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেছেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়া সংরক্ষণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তবে কোন কারণে যদি চামড়া নষ্ট হয়ে যায় তার দায় ট্যানারি মালিকরা নেবেন না।

তিনি বলেন, সাভারে পানি ও বিদ্যুত নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে চামড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে গ্যাসের তা কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। সংযোগ চাইলেও দেয়া হচ্ছে না। তাই কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদ পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কোরবানিতে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে পারবে না। একদিকে অবকাঠামো নির্মাণে টাকা খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে কারখানা প্রস্তুত নয়। এই বাস্তবতায় কেউ চামড়া কিনবে না। তাই এখন পোস্তার আড়তদার ও বেপারিরাই আমাদের ভরসা। আড়তমালিকরা চাইলে চামড়া কিনে তা মজুদ করতে পারবে। কোরবানির আগে কোনভাবেই সব কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় চামড়া ব্যবসার ঝুঁকি আরো বেড়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আড়তদাররা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুত। কিন্তু ট্যানারি স্থানান্তর ও চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের দাম বাড়ার কারণে চামড়া ব্যবসায় একটু সমস্যা হতে পারে। কারন গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণের দাম আরো বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত।