প্রশ্নফাঁস ও কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা : জিম্মি হচ্ছে মেধাবীরা

ঢাকা: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ক্ষেত্রে একধরনের সিন্ডিকেট কাজ করে। যারা খুব প্রভাশালী। তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বোর্ডের প্রশ্ন আনায়নকারী কর্তৃপক্ষের একাংশ কোন না কোনভাবে জড়িত থাকে। অনেকে বলছেন, প্রশ্নফাঁস ও কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে জিম্মি হয়ে পড়ছে মেধাবী ছাত্ররা। শিক্ষাবোর্ড পরীক্ষাসহ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস বিষয়ে টিআইবি’র একটি গবেষণার প্রতিবেদনের আলোকে তিনি এসব কথা বলেছেন।

তিনি আরো বলেন, আরেক ধরনের সিন্ডিকেট আছে যারা প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্য বা প্রশিক্ষণ বাণিজ্য করে। রাষ্ট্রের সরকারি খাতে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশিক্ষণ সেবায় নিয়োজিত এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথেও তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। এছাড়া, আন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারি ব্যাংকেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা থাকতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।

সাম্প্রতি দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে অগ্রণী ব্যাংকের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, জনতা ব্যাংকের ওই পদের নিয়োগ কার্যক্রম তিন মাসের জন্যে স্থগিত করেছে আদালত।

২০মে অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে দুই দফায় পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সকালের পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময় অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু ওই পরীক্ষা শুরুর অন্তত সাত-আট ঘন্টা আগে প্রশ্নপত্র উত্তরসহ পরীক্ষার্থীদের হাতে হাতে চলে যায়। রাত দু’ইটায় ফেসবুক ইনবক্সে উত্তরসহ পেয়ে যান অনেক পরীক্ষার্থী।

এভাবে নিয়োগ হলে ব্যাংকিং খাতে বা ব্যাংকের সেবার মানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পরবে বলে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুরো রাষ্ট্রীয় মালিকানা খাত যদি মেধাশূণ্য হয়ে যায়, মেধাহীন ব্যক্তিরা যদি অসৎ উপায়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাহলে তাদের সেবার মানটাও যেমন নিম্নতর হবে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর মানুষের আস্থা কমে যাবে।

যদিও বাংলাদেশে চাকরির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নতুন নয়। গত এপ্রিলে জনতা ব্যাংকের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠে। প্রশ্ন ফাঁসের ওই ঘটনা নিয়ে আন্দোলনের পরেও কাজ না হওয়ায় শেষপর্যন্ত এ মাসে উচ্চাদালত থেকে ওই পরীক্ষার সকল নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। প্রশ্ন ফাঁস কেন এবং কিভাবে হচ্ছে? পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষই এর দায় নিচ্ছে না। ফলে বারবার প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে কেবল চরম ভোগান্তিতে পড়ছে কয়েকলাখ চাকরি প্রার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশ্নফাঁস তদন্ত করার জন্যে কর্যকরি কোনো বিভাগ নেই। পরীক্ষার্থীরা কোন অভিযোগ করতে গেলে তাদের কাছ থেকে রোল নম্বর চাওয়া হয়, যা পরোক্ষভাবে ওই পরিক্ষার্থীকে হুমকি দেয়ার শামিল। কিন্তু বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোকে কিভাবে সামাল দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে। দরপত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষার দায়িত্ব দিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব মোশারফ হোসেন খান বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া। যেহেতু নিয়োগ প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে সে কারণে টেন্ডারিংয়ের মাধমে কোন যোগ্য ডিপার্টমেন্টকে আমারা পরীক্ষার কাজটি দিয়ে থাকি। তারা পরীক্ষা নিয়ে খাতা দেখে ফলাফলের তালিকা দিয়ে দেয়। সে অনুপাতে আমার ধাপে ধাপে এগিয়ে যাই। প্রশ্নফাঁস তদন্ত করার দায়িত্ব আমাদের না।