ঘাপটি মেরে আছে নব্য জেএমবি’র দ্বিতীয় সারির সামরিক কমান্ডাররা

ঢাকা: নব্য জেএমবি’র আধ্যাত্মিক নেতা আবুল কাশেম ধরা পড়লেও ঘাপটি মেরে আছে সংগঠনের দ্বিতীয় সারির সামরিক কমান্ডাররা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির কারণে সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারছে না। গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর কয়েকটি অভিযানে নব্য জেএমবি’র সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীসহ প্রথম সারির সন্ত্রাসবাদী নেতারা নিহত হলেও নিষ্ক্রিয় হয়নি সংগঠনটি।

এদিকে বৃহস্পতিবার বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় আমিজুল ইসলাম ওরফে আলামিন ওরফে রনি নামের নব্য জেএমবি’র এক নেতা নিহত হয়েছে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন নব্য জেএমবি’র উত্তরবঙ্গের সামরিক শাখার প্রধান ছিলো। শেরপুরের জোয়ানপুরে বোমা বিস্ফোরণ মামলার সন্দিগ্ধ আসামি বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

শেরপুর থানার ওসি খান এরফান জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আমিজুলকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজারামপুর থেকে পুলিশ আটক করে। এ সময় তার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পুলিশের দুইজন সদস্যও আহত হয়। পরে জেএমবি’র অন্য সদস্যদের আটকের উদ্দেশ্যে তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানে যাওয়ার সময় জামনগর কালভার্টের কাছে তার সহযোগীরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এসময় দুইপক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়ার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় ঘটনাস্থল একটি পিস্তল, তিনটি গুলি আর দুইটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছেন, নব্য জেএমবি’র দ্বিতীয় ধাপের নেতারা সংগঠনের হাল ধরে আবারো বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। আর দ্বিতীয় সারির বেশকজন সন্ত্রাসবাদী নেতাকে গায়েন্দারা মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী বলে তালিকা তৈরি করেছে। এদের মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে সিটি গোয়েন্দারা বনানী এলাকায় একটি যাত্রীবাহি বাসে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। এর আগে তালিকাভুক্তদের ধরতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামে গোয়েন্দারা।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে নওগাঁর আত্রাই এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবি’র তালিকাভুক্ত সদস্য আইচান আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করে। আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা জানান, ২০০৪ সালে জেএমবি’র উত্থানের সময় বাংলাভাই ও সর্বহারা নিধন নামে অবৈধ হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় সে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছিল। এরপর থেকে সে পলাতক ছিল।

এছাড়া গত ২০ ফেব্রুয়ারি না’গঞ্জের সোনারগাঁও থেকে নব্য জেএমবি’র তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই ও বিষ্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। তারা তিনজনই অস্ত্র প্রশিক্ষণে সিদ্ধহস্ত বলে র‌্যাব জানিয়েছে। তারা হলেন, মোস্তফা, আবু রায়হান ওরফে হিমেল শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীন। এদের কাছ থেকে বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তারা জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন আমির মৃত্যুদন্ড সাজা কার্যকর হওয়া ওহাবী মালানা আব্দুর রহমানের অনুসারী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব অভিযান চালিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা থেকে জিহাদি বই ও লিফলেটসহ আনসার ওরফে তালহা ওরফে মামুন নামে জেএমবির এক সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। তার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ির হাটবাড়ি গ্রামে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় থাকা নব্য জেএমবির নেতারা হলো, সংগঠনটির বর্তমান শীর্ষ নেতা মাইনুল ইসলাম ওরফে আবু মুসা, নুরুল ইসলাম মারজান, তার ভগ্নিপতি হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে জয়পুরহাটের সাগর,বাসারুজ্জামান ওরফে চকোলেট, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, ফিরোজ ও সেলিম। এর মধ্যে প্রথম সাতজন গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। অপরদিকে আশকোনায় অভিযানের পর নিউ জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফিরোজ ও সেলিমের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আত্মঘাতী নারী সন্ত্রাসবাদীদের দিয়ে ‘স্পর্শকাতর’ কোনো এলাকায় হামলার পরিকল্পনাও করছে নব্য জেএমবি। দ্বিতীয় সারির এসব সন্ত্রাসবাদীর মধ্যে চারজন গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী। এসব সন্ত্রাসবাদীকে আইনের আওতায় আনা গেলে নিউ জেএমবির নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে যাবে বলে গোয়েন্দাদের ভাষ্য।

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসবাদী নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরী, তানভির কাদরী ওরফে আবদুল করিম এবং মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন সন্ত্রাসবাদী নেতা নিহত হওয়ার পর মুসা নিউ জেএমবির হাল ধরে। সে তানভীর কাদরীর ঘনিষ্ঠ ছিল। এমনকি তানভীরের দুই ছেলে তাহরীম কাদরী ও আফিফ কাদরীর শিক্ষকও ছিল। অপরদিকে নুরুল ইসলাম মারজান গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার ছিল। তার ভগ্নিপতি হাদিসুর রহমান সাগর নিউ জেএমবির জন্য অস্ত্র ও বিস্ফোরক ভারত থেকে দেশে আনতো। সেও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী। মারজান তার মাধ্যমেই সন্ত্রাসবাদীবাদে জড়িয়েছে। আর ছোট মিজান, বড় মিজান এবং সোহেল মাহফুজও নিউ জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত। আর গুলশান হামলার গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল সোহেল মাহফুজ ও বড় মিজান।