সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রার নির্দেশ: ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

ঢাকা: বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ হওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের কথিত মঙ্গল(!) শোভাযাত্রা অমুসলিমদের দ্বারা বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় চলতি বছর বর্ষবরণের আয়োজনে এটি বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা এসেছে। নির্দেশ অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আতওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অমঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বাধ্যতামূলক নববর্ষ পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন দেশের সব শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ বছর আড়ম্বরের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে এমন ঘোষণা আসার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের হক্কানী ওলামা-মাশায়েখগণ মনে করছেন- সরকার তার প্রতিশ্রুতির খেলাফ করে দেশের মুসলমানদেরকে হারাম কাজে বাধ্য করার জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অমঙ্গল শোভাযাত্রার নির্দেশ জারি করেছে। বর্তমান সরকারের নির্বচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো- ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’।

বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী, আগামী ১৪ এপ্রিল কথিত বাংলা নববর্ষ শুরু হচ্ছে। এদিন সারা দেশে চলবে বর্ষবরণের হুজ্জতি। আর এবার অন্যান্যবারের চেয়ে ভিন্নমাত্রায় বর্ষবরণের হুজ্জতির আয়োজন করা হচ্ছে। বিধর্মীয় অপসংস্কৃতি (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অমুসলিমরা বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এবারের বর্ষবরণের আয়োজনে এ (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রাকে উদযাপনে সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আতওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ হারাম নববর্ষ পালন করতে হবে বলে বিতর্কিত নির্দেশ জারি করেছে সরকারি মহল। এ নির্দেশের ফলে দিনটিতে অন্য যেকোনও বছরের চেয়ে এ বছর বেশি হজ্জতি-বজ্জাতি কার্যক্রম চলবে বলে হক্কানী আলিম-উলামাগণ মনে করেন।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন সংবাদিকদের বলেছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ বছর আড়ম্বরের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে- সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের সব স্কুল ও কলেজে আড়ম্বপূর্ণভাবে বর্ষবরণ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কথিত বাংলা নববর্ষ পালনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয় স্কুল কলেজ পর্যায়ে বর্ষবরণের হুজ্জতি-বজ্জাতি আয়োজনের। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর গত ১৬ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।

মাউশি’র সহকারী পরিচালক (এইচআরএম) আশেকুল হক স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ আয়োজন উপলক্ষে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পহেলা বৈশাখে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও আড়ম্বরের সঙ্গে বাংলা বর্ষবরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনেস্কো কর্তৃক (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে বিশ্বঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করায় বিষয়টি গুরুত্বসহ উদযাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’

৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ও হক্কানী ওলামা-মাশায়েখগণ এ বিতর্কিত নির্দেশের খবর জানার পর বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ নির্দেশকে হঠকারী আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বলেন- (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়। এটা বিধর্মী মুশরিকদের ধর্মীয় উৎসব ও পূজার দিন, যা কোনো মুসলমান পালন করতে পারে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নববর্ষ পালনের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশ’র আমির ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মুফতি রুহুল আমীন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী মুসলমান; তারা ধর্মপরায়ণ। মঙ্গল শোভাযাত্রা মুসলমানের আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী এবং দেশের পরিবেশ-সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ তিনি বলেন, ‘শোভাযাত্রার মাধ্যমে বর্ষবরণের কথা বলে দেশের ছেলে-মেয়েদের রাস্তায় নামিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অর্জিত সুনাম ব্যাহত করতে অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এ ধরনের নির্দেশ দিয়েছে।’
মুফতি রুহুল আমীন অনতিবিলম্বে এ ধরনের নির্দেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘অন্যথায় যেকোনো অবস্থার দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।’

পাশাপাশি এ খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলছে নানা সমালোচনার ঝড় ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া।
হক্কানী ওলামা-মাশায়েখগণ বলেন, সরকারের নির্বচনী প্রতিশ্রুতি হলো- ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’। কিন্তু (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালনে বাধ্য করার নির্দেশ জারি করে সরকার সে ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। হক্কানী ওলামা-মাশায়েখগণ আরো বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে- ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল-মুহব্বত রাখবে, তার হাশর-নশর ওই সম্প্রদায়ের সাথেই হবে।’ কাজেই সরকার বিধর্মী মুশরিকদের ধর্মীয় উৎসবকে মুসলমানদের পালনে বাধ্য করার নির্দেশ জারির মাধ্যমে মুসলমানদের হাশর-নশরও বিধর্মীদের সাথে হবে বলে প্রতীয়মান হয়। হানাফী মাযহাবে বিখ্যাত এক ইমাম হযরত ইমাম কবীর হাফস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে ফতওয়া দিয়েছেন- ‘নববর্ষ উপলক্ষে কেউ একটি ডিমও খরচ করলে বা দান করলে, তার ৪০ বছরের ইবাদত বরবাদ হয়ে যাবে।’ তাই সরকারিভাবে নববর্ষ ও (অ)মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনে বাধ্য করার মাধ্যমে এদেশের মুসলমানদেরকে কাফিরে পরিণত করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে সরকারের প্রতিশ্রুতি ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’ এটার খিলাফ করে আইন জারি করা।