মহেশখালীতে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জাপানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়া
ঢাকা: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে জাপানের অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে মালয়েশিয়াও। বাংলাদেশও এতে সম্মতি দিয়েছে। এ নিয়ে গত বুধবার একটি যৌথ উদ্যোগ চুক্তি (জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট) সই হয়েছে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫০ কোটি ডলার।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। চলতি বছরের ৩০ মে মন্ত্রিসভা কমিটি এ-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন করে।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট থাকবে। প্রতিটির উত্পাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার অমাবস্যাখালী ইউনিয়নের হাউনোক মৌজার পানির চরা এলাকায় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। এতে জমির প্রয়োজন হবে ৫৫০ একর। প্রতিদিন এতে ১১ হাজার টন কয়লা ব্যবহার হবে। কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানির সম্ভাব্য দেশ হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। যে দেশ থেকে কয়লা আমদানি করা হবে, সে দেশই প্রকল্পস্থানে কয়লা পৌঁছে দেবে। সরকার এ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে। তবে ২৫ বছর পর মালয়েশিয়া পুরোপুরি মালিকানা হস্তান্তর করবে। ২০১৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত বুধবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশটির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়ার কথা জানান। জিটুজি ভিত্তিতে মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় অবকাঠামো-বিষয়ক মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত উতামা এস সামি ভেলু বলেন, মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ মালয়েশিয়াকে দেয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে গত বুধবার মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), কনসোর্টিয়াম অব তেনাগা নাসিনল বারহাদ (টিএনবি) ও পাওয়ারটেক এনার্জি এসডিএন বারহাদের (পিইএসবি) মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. শামসুল হাসান মিয়া। তেনাগার পক্ষে স্বাক্ষর করেন এর প্রেসিডেন্ট ইর আজমান মোহাম্মদ ও পাওয়ারটেকের পক্ষে এর পরিচালক মার্ক উইলিয়াম লিং লি মেং।
এদিকে একই স্থানে ২ হাজার ২০ মেগাওয়াটের আরো দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুর ও চীন। এর মধ্যে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ৭০০ মেগাওয়াট উত্পাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ১৫ জুলাই চীনের সঙ্গেও সমঝোতা হয়েছে। চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান হবে পাশাপাশি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম তামিম সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিশেষ আইনে এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।