মিরসরাইয়ে ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ ঘিরে অভিযান ॥ গ্রেনেডসহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

চট্টগ্রাম: জেলার মিরসরাইয়ের গোভনিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী আস্তানা থেকে ২৯টি ছোট-বড় গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে কাউন্টার টেররিজম টিমের সদস্যরা। আজ বুধবার চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কুমিল্লার চান্দিনায় বোমামসহ আটক ২ সন্ত্রাসী হাসান ও জসিমের স্বীকারোক্তি মোতাবেক কাউন্টার টেররিজম টিম রাতভর অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ২৯টি ছোট, বড় গ্রেনেড, ২৪০টি বোমা তৈরির সরঞ্জামের ব্যাগ, ৪০টি জেল বোমা, ৯টি চাপাতি, ৭টি কালো পাঞ্জাবি ও একটি ব্যানার উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার জানান, আন্তর্জাতিক কোন সন্ত্রাসী সংগঠনকে তারা অনুসরণ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোন্ সংগঠন তা তিনি বলতে পারেননি।

তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত এ চক্রের নারীসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তির আলোকে জানা যায় চক্রের সঙ্গে আরো ৮/৯ জন জড়িত রয়েছে। বোমাগুলো এখনো ঘটনাস্থলেই রয়েছে। সিএমপি’র বোমা বিশেষজ্ঞ দল এসে এগুলো ধ্বংস করবে। তা না হলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত অধিক গতিসম্পন্ন গাড়ি চিহ্নিতকরণে চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় অভিযান চলছিল। ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির সার্জেন্ট কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চলাকালীন বেলা সোয়া ১১টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের অধিক গতি চিহ্নিত হয়। পুলিশ গাড়িটি ধাওয়া করে থামানোর পর বাস থেকে নেমে আসা যাত্রীবেশী দুই যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। বোমাটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় পুলিশ তাদের পেছনে ধাওয়া করলে, তারা বোমা ছোড়া অবস্থায় দৌঁড়ে একটি গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে। ওই সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জসিমকে এবং আহত অবস্থায় হাসানকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪টি বোমা ও ১টি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।

কুমিল্লায় আটক সন্ত্রাসীদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল:

কুমিল্লার চান্দিনায় হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতার দুই জেএমবি সদস্য তাদের সহযোগীদের নিয়ে দেশে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছিল। আটককৃত হাসান ও জসিম ওরফে জহির বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্য। হাসানকে নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও জেলা পুলিশ মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে অভিযান চালিয়ে রেদোয়ান ভবন নামের একটি বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড গ্রেনেড, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। বুধবার কুমিল্লা পুলিশ সুপারের সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরা জানান, মঙ্গলবার জেএমবি সদস্য জসিম ও হাসান চট্টগ্রাম থেকে ফেনীতে এসে বাস পরিবর্তন করে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে ওঠে। কিন্তু ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার তীরচর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক ওই গাড়িটি তল্লাশির মুখে পড়লে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেফতার হওয়া দুই জেএমবি সদস্যের মধ্যে বর্তমানে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে জসিম ওরফে জহির এবং অপর জেএমবি সদস্য হাসান। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে হাসানকে নিয়ে পুলিশ মিরসরাইসহ আরও কয়েকটি স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

মিরসরাইয়ে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিষয়ে পুলিশ সুপার জানান, এখনও অভিযান শেষ হয়নি। অন্য স্থানেও অভিযান হতে পারে, অভিযান শেষ হলেই তা পুলিশের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় জানানো হবে। এদিকে পুলিশ হাসানের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি জানালেও জসিমের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।