আইএস বানাতে মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে আসছে
ঢাকা: দেশে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন হচ্ছে বিদেশ থেকে। সন্ত্রাসবাদে রিক্রুট করার লক্ষ্যে বিদেশ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আসছে। গুলশান এবং শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের উত্স, মদদদাতা, পরামর্শদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। অনেক মদদদাতার নাম এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে। তাদের সূত্র ধরে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের উত্স খোঁজা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসবাদ তত্পরতায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর সরকার জামায়াতুল মুজাহেদিন (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হিযবুত তাহরীর, শাহাদাত-ই-আল হিকমা এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে ৬টি উগ্রবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
তবে এসব সংগঠনের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি থেমে নেই। এসব সংগঠনের আলাদা পৃষ্ঠপোষক হলেও এদের শেকড় একই বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। দেশের একটি রাজনৈতিক দলও জঙ্গিদের পৃষ্টপোষকতা করছে বলে জানা গেছে।
পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের উত্স, মদদদাতা, পরামর্শদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজতে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা শিগগিরই মূল উত্স খুঁজে বের করতে পারবো বলে আশা করছি।
গুলশান হামলায় জড়িতদের পরিচয় যখন প্রথম প্রকাশ পেল, তখন তা স্তম্ভিত করেছিল বাংলাদেশকে। পাঁচ হামলাকারীর তিনজনই ঢাকার উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকার নামকরা বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র। এরপর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলাকারীদের একজনের পরিচয় প্রকাশ করে পুলিশ। নিহত ওই তরুণ ছিল ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
এসব ঘটনায় সন্ত্রাসবাদ দেশে নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতদিন সন্ত্রাসবাদে শুধু উত্তরবঙ্গের অশিক্ষিত, অভাবী, মাদরাসা ছাত্রদের হিসাবে রাখলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন উচ্চবিত্ত ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত তরুণরাও সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, কেউ কেউ সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে ঐক্যের কথা বলছে। এভাবে ঐক্য হবে না। অনেকে এসে অনেক এজেন্ডা দেবে। এতে উল্টো লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হবে। যার যার অবস্থান থেকে প্রথমেই আমাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন সন্ত্রাসবাদের শেকড় ও উত্পত্তিস্থল কোথায়। তারপর চিহ্নিত করা দরকার পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তারা সন্ত্রাসবাদী হচ্ছে। এর পরেই সিদ্ধান্ত হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসবাদ নির্মুল করা।
সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই দেশে সন্ত্রাসবাদের উত্থান হচ্ছে। কোনো কোনো গোষ্ঠী রাজনীতির প্রবাহ নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য নেপথ্যে থেকে সন্ত্রাসবাদের সহায়তা করে থাকে। এদের বিষয়ে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সংগঠন, পৃষ্ঠপোষক এবং নেতৃত্ব -এই তিনটি বিষয় সনাক্ত করতে হবে। আগে গরিব ঘরের সন্তানদের টাকার লোভ দেখিয়ে সন্ত্রাসবাদী বানানো হতো। এখন বিদেশ থেকে সন্ত্রাসবাদী বানাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আসছে। তাই উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানদেরও ব্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে নানা কায়দায়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সন্ত্রাসবাদে উত্সাহ দেয় এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের একটি অংশ সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে। প্রবাসীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপন ও সংস্কার, এতিমদের লেখাপড়া এবং খাওয়ার খরচ মেটানোর কথা বলে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এই অর্থের একটি অংশ সন্ত্রাসবাদীদের কাছে চলে যায়।
র্যাবের ইন্টালিজেন্স উইংয়ের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকদের সনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আশা করছি শিগগিরই সন্ত্রাসবাদের উত্স খুঁজে পাওয়া যাবে।