ফরমালিনের নামে আম ধ্বংস করা ভুল

  • ফরমালিন শনাক্ত করার যন্ত্রগুলো সঠিক নায়
  • প্রাকৃতিকগতভাবেই আমে ১.২২ থেকে ৩.০৮ পিপিএম ফরমালিন থাকে
  • ‘আম পাকানো এবং সংরক্ষণে কৃত্রিম ফরমালিন কোনো কাজেই আসে না

ঢাকা: ফরমালিন ব্যবহারের ভুল ধারণা ও মিডিয়ার ষড়যন্ত্রমূলক গুজবের কারণে ২০১৩ সালে প্রচুর পরিমাণে আম ধ্বংস করা হয়েছিল। যা ছিল চরম ভুল ও দেশবিরোধী। এ ব্যাপারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ডাই প্রকল্পের টিম লিডার শোয়েব চৌধুরী বলেন, ফরমালিন ব্যবহার নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ছিল। ওই কারণেই ২০১৩ সালে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় আম ধ্বংস করা হয়েছিল। ওই সময় আমে ফরমালিনের উপস্থিতি শনাক্ত করার যন্ত্রগুলোও ঠিক ছিল না। ফলে ফরমালিনের নামে আম ধ্বংস করা ছিল ভুল। এর ফলে পথে বসেছে দেশের আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। দেশী আমচাষীরা তাদের উৎপাদিত আমে ফরমালিন ব্যবহার করে না। কোনো কোনো অসৎ ব্যবসায়ী আম পাকাতে কার্বাইড ব্যবহার করে। আমের বাজারজাতকরণে নীতি সহায়ক পরিবেশ বিষয়ে শোয়েব চৌধুরী এসব কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে আম পাকানোর জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না বলে জানান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘আম পাকানো এবং সংরক্ষণে কৃত্রিম ফরমালিন কোনো কাজেই আসে না। বরং প্রাকৃতিকগতভাবেই আমে ১.২২ থেকে ৩.০৮ পিপিএম পরিমাণে ফরমালিন থাকে, যা আমকে পাকতে ও সংরক্ষণে সাহায্য করে।’

বিপরীতে আম পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার প্রসঙ্গে আব্দুর রহিম বলেন, দেশে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আম পাকাতে এটি ব্যবহার করে থাকে। এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আম পাকানোর জন্য ২শ থেকে এক হাজার পিপিএম পরিমাণ ইথিফোনের ব্যবহার নিরাপদ বলে জানান তিনি।

বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার আমের বাজার রয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে ড. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের দেশে সঠিক সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে আহরণের পর প্রায় ৩৩ ভাগ আমই নষ্ট হয়ে যায়।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক বলেন, ‘জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আম চাষীদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার ফলে রাজশাহীর পর সাতক্ষীরাতেও বিস্তৃত পরিসরে আমের উৎপাদন হচ্ছে।’ তিনি আমচাষীদের কীটনাশক ব্যবহারের সচেতন করার কার্যক্রম গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ডিসিসিআই’র মহাসচিব এ এইচ এম রেজাউল কবির বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের পণ্য কেনায় ব্যবহৃত অর্থের মূল্য রয়েছে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে আমের গুণগত মান নিশ্চিত করা আবশ্যক।’ তিনি বলেন, ‘আমে কার্বাইড ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরো সচেতন হতে হবে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএ হাশেম, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জাকির হোসেন এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন।